হোম > ইসলাম

শান্তি প্রতিষ্ঠায় নবীদের ৩ কর্মপন্থা

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা

ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের সার্বিক নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। ইসলামের অনুসরণ ও অনুকরণ জীবনকে শান্তিময় করে তোলে। নবী-রাসুলগণ মানুষকে শান্তির পথ দেখিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভ করেছেন, তাঁরা রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠায় নবী-রাসুলদের ক্ষমা, উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতা দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। 

ক্ষমা
ইউসুফ (আ.) মিসরের খাদ্যমন্ত্রী এবং পরে মিসরের অধিপতি হয়েছিলেন। তখন দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং তা দূর-দূরান্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনের কেনান অঞ্চল থেকে খাদ্যসামগ্রী লাভের আসায় ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরাও মিসরে আসেন। ৩০ বছরের বেশি সময় আগে যে ভাইয়েরা ইউসুফ (আ.)কে গুম করতে অন্ধকার কূপে ফেলে দিয়েছিলেন, তাঁরা আজ অসহায় হয়ে খাদ্যসামগ্রী পেতে ইউসুফ (আ.)-এর কাছে উপস্থিত হন। তাঁরা ইউসুফ (আ.)কে চিনতে না পারলেও তিনি তাঁদের চিনে ফেলেন। তিনি তাঁদের ক্ষমা করে দেন। কোরআনের ভাষায়, ‘সে (ইউসুফ) বলল, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা ইউসুফ: ৯২)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শান্তিপূর্ণ ‘মক্কা বিজয়’ ইতিহাসের এক চমকপ্রদ অধ্যায়। কার্যত তিনি বিনা যুদ্ধে ও বিনা রক্তপাতে মক্কা জয় করেন। যে জাতি অত্যাচার-নির্যাতন ও যুদ্ধ করে আজীবন রাসুলুল্লাহ (সা.)কে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে, মক্কা বিজয়ের দিন সাধারণ ক্ষমা করে এবং তাদের প্রতি উদার মনোভাব দেখিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘আমি তা-ই বলব, যা আমার ভাই ইউসুফ (আ.) বলেছিলেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (নাসায়ি: ১১২৯৮) 

উদারতা
রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়। মদিনার পরস্পরবিরোধী চিন্তা, সংস্কৃতি ও ধর্মানুসারীদের একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ঐকমত্যে উপনীত করতে সচেষ্ট হন। সবাইকে একটি লিখিত চুক্তির অধীনে ঐক্যবদ্ধ করেন। এ চুক্তিই ইতিহাসে ‘মদিনা সনদ’ নামে খ্যাত। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও দেশপ্রেমে ঐকমত্যের আলোকেই ইসলামি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গোত্র-উপগোত্রে বিভক্ত জাতি শান্তিপূর্ণ জীবন ফিরে পায়। মহান আল্লাহ রাসুল (সা.)কে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন। ফলে তিনি সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নিতেন। আল্লাহ বলেন, ‘এবং কাজে-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো, এরপর তুমি কোনো সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯) 

পরমতসহিষ্ণুতা
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দাউদ ও সোলায়মান (আ.)-এর একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং স্মরণ করো দাউদ ও সোলায়মানের কথা, যখন তারা বিচার করছিল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে; তাতে রাতে প্রবেশ করেছিল কোনো সম্প্রদায়ের মেষ; আমি প্রত্যক্ষ করছিলাম তাদের বিচার। এবং আমি সোলায়মানকে এ বিষয়ের মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমি দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আমি পর্বত ও পাখিদের অধীন করে দিয়েছিলাম—তারা দাউদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত; আমিই ছিলাম এসবের কর্তা।’ (সুরা আম্বিয়া: ৭৮-৭৯) আয়াতে ইঙ্গিত করা বিষয়টি হলো—এক ব্যক্তির কয়েকটি মেষ এক কৃষকের চারাগাছ নষ্ট করে। কৃষক দাউদ (আ.)-এর কাছে বিচার প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষতিপূরণস্বরূপ মেষগুলো কৃষককে দিয়ে দেওয়ার রায় দেন। উল্লেখ্য, মেষপালের মূল্য বিনষ্ট চারাগাছের সমান ছিল। তখন সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘আমি রায় দিলে এর চেয়ে উত্তম হতো এবং উভয় পক্ষ উপকৃত হতো। আমার মতে, কৃষকের কাছে মেষগুলো থাকবে এবং সে এগুলোর দুধ ও পশম থেকে উপকৃত হবে। আর মেষের মালিক জমিতে চাষাবাদ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে। এরপর কৃষক তার জমি এবং মেষপালের মালিক মেষপাল ফেরত পাবে।’ দাউদ (আ.) এই রায় পছন্দ করেন এবং তা কার্যকর করেন।

ইসলামের সার্বিক নীতিমালা ইহকালীন ও পরকালীন শান্তির জন্যই প্রণীত হয়েছে। জান্নাত শান্তির চূড়ান্ত স্তর। তা অর্জনে সচেষ্ট মানুষের কর্মকাণ্ডে পৃথিবীর জীবনও শান্তিময় হয়ে ওঠে। নবী-রাসুলগণ মানুষকে এই শান্তির পথ দেখিয়েছেন এবং শান্তি রক্ষার প্রয়োজনে ক্ষমা, উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

নামাজের ইমামতি করতে যে যোগ্যতা দরকার

কোরআনে ইসলাম প্রচারকের অপরিহার্য ৫ গুণ

জানাজা ও কাফনদাফনে অংশ নেওয়ার সওয়াব

হালাল-হারাম নিয়ে সংশয় থাকলে করণীয়

আসরের নামাজ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

কোরআন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই

মুসলিম ঐতিহ্যে টুপির গুরুত্ব

ব্যবসা-বাণিজ্যে নিষিদ্ধ ৮ কাজ

নামাজে সতর ঢাকা সম্পর্কে সতর্কতা

সেকশন