পথে বের না হলে পথ চেনা যায় না, এ কথা ভেবেই পথে নেমেছিলেন সাইফুল ইসলাম শান্ত। সময়টা ২০১৮ সাল। ডিসেম্বরের এক শীতে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের জিরো পয়েন্ট থেকে আলীকদম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার হেঁটে দুই দিন পর বাড়ি ফেরেন শান্ত। সেখান থেকে শুরু তাঁর হাইকিং–জীবনের। হাঁটাহাঁটির ভূত শান্তর মাথায় চাপে ২০১৬ সালে।
সেই হাঁটাহাঁটি এখন আর এক তারুণ্যের খেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। শান্ত এখন স্বপ্ন দেখছেন, দেশের প্রথম মানুষ হিসেবে হেঁটে বিশ্বভ্রমণ করার। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শান্ত ঘোষণা দেন, ২২ মার্চ জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে থেকে বিশ্বভ্রমণের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করবেন তিনি।
কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার মানুষ সাইফুল ইসলাম শান্ত। স্নাতক পর্যায়ে পড়াকালীন সময়ে দৌড়, ট্রেকিং ইত্যাদি স্পোর্টস ইভেন্টে অংশ নিতেন। শান্ত বলেন, ‘রাজধানী ও দেশের অন্যান্য জেলায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রানিং ইভেন্ট দিয়ে রানিং জগতে জড়িয়ে যাই।’ কলকাতায় ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত টাটা স্ট্রিট টোয়েন্টি ফাইভ কে রানিং ইভেন্ট, দার্জিলিংয়ের নাজিলিং হিল ম্যারাথন ২০২২সহ দেশ-বিদেশের ২৫টির বেশি রানিং ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। বিশ্বভ্রমণ প্রসঙ্গে শান্ত জানান, ঢাকা থেকে হাঁটা শুরু করে যশোর-বেনাপোল সীমান্ত পার হয়ে কলকাতায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছেন তিনি। এরপর ভারতের ঝাড়খন্ড, পাটনা, লক্ষ্ণৌ, উত্তর প্রদেশ হয়ে রাজধানী দিল্লি থেকে উজবেকিস্তান যাওয়ার কথা তাঁর। তারপর পর্যায়ক্রমে মধ্য এশিয়ার তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা আছে সাইফুল ইসলাম শান্তর। এশিয়ার পরে আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ভ্রমণের পর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে গিয়ে বিশ্বভ্রমণের পরিসমাপ্তি ঘটানোর পরিকল্পনা করছেন তিনি।
পুরো ভ্রমণের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও মনিটরিংয়ে থাকবে বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং হাইকার সোসাইটি অব বাংলাদেশ। এবারই প্রথম নয়। শান্ত ২০২০ সালে ৪০ দিনে হেঁটে দেশের ১৬টি জেলার ১ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন। ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত হেঁটে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ৩ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন তিনি। এত রেকর্ড আর দেড় বছরের প্রস্তুতির পর বিশ্বভ্রমণের সাহস করেছেন শান্ত।
সাইফুল ইসলাম শান্তর ৫০০ কিলোমিটার ভ্রমণের স্পনসর ইউসিআর। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে স্পনসর হিসেবে।