নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দেশের সব জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ভাসমান বা অস্থায়ীভাবে বসবাসরতদের এবার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে গত ২০ জানুয়ারি টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স সুবিধার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া ৩ লাখ ৩৬ হাজার জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা ব্যবহার করা হবে।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসে (বিসিপিএস) করোনা ভ্যাকসিন ও করোনা পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভাসমান দিনমজুর যাঁরা, তাঁদেরও টিকা দেওয়া হবে। তাঁদের জনসনের টিকা দেওয়া হবে। আমাদের টিকার কোনো ঘাটতি নেই।
বুস্টার ডোজ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আগে আমরা ৫০ বছর বয়সীদের বুস্টার ডোজের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু সেভাবে ফল পাওয়া যায়নি। তাই এখন থেকে ৪০ বছর বয়সের ওপরের সবাইকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে ইউনিসেফের বিবৃতির বিষয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সেটি দেখেছি। তবে টেকনিক্যাল কমিটি পর্যালোচনা করে যে মত দেবে, আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
একই অনুষ্ঠানে সব শিশুকে টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ শিশু শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। এবার স্কুল শিক্ষার্থী ছাড়াও মাদ্রাসা ও ১২ বছরের বেশি সব শিশুকে টিকাকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে নিকটস্থ যেকোনো কেন্দ্রে জন্মসনদ নিয়ে গেলেই টিকা নিতে পারবে শিশুরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের হাতে এই মুহূর্তে ৯ কোটি টিকা আছে, যা দিয়ে ৪ কোটি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। এত দিন আমরা শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়েছি, এখন ১২ বছরের বেশি যেকোনো শিশুই টিকা নিতে পারবে।
জাহিদ মালেক বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, বাংলাদেশেও একই মাত্রায় বিস্তার ঘটছে। ওমিক্রনের প্রভাবে আগের তুলনায় ২০ গুণ শনাক্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে মৃত্যু বেড়েছে ৪ গুণের বেশি। সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুও বাড়বে, এটা হতে দেওয়া যাবে না।
ওমিক্রনকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওমিক্রনের আগে দেশের সব হাসপাতালে দু-আড়াই শ রোগী ছিল, যা এখন আড়াই থেকে তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। এটি আরও বাড়তে থাকবে।
ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে মৃত্যু কমেছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, যেখানে ভারতে গতকাল ৮০০ মারা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে হাজারের বেশি, সেখানে আমাদের এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এটি কমাতে হলে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যে হারে আক্রান্ত দেখতে পাচ্ছি, প্রকৃত অবস্থা অনেক বেশি। অফিস অর্ধেক লোক দিয়ে চালানো হচ্ছে কিন্তু অন্য সবখানে মানুষের ভিড় লেগেই আছে।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘গত এক মাসে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা দেওয়া হয়েছে। এটা মাইলফলক। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৫ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ১০ কোটি প্রথম ডোজ দেওয়া হবে বলে আমরা আশা করি।’
ট্রাকশ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন, সমিতিতে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এখনো টিকা নেননি। তাঁদের টিকা দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সব শিল্পকারখানায় মোট আড়াই কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।