আজাদুল আদনান, ঢাকা
মাসখানেক আগেও টিকার সংকট ছিল। তবে এখন তা কিছুটা কেটেছে। গত আগস্টে দেশে টিকা এসেছে প্রায় সোয়া ১ কোটি। এ মাসে ২ কোটির বেশি পাওয়ার আশা। মজুত বাড়ায় টিকা দেওয়ার পরিধি বাড়ছে। ফাইজারের টিকা সংরক্ষণে যে জটিলতা ছিল, সেটিও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে। ফলে গণটিকা না হলেও মাসে দুই কোটি টিকা দিতে চায় সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে গত আট মাসে কেনা, উপহার ও টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, মডার্না ও ফাইজারের ৩ কোটি ৯১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুধু আগস্টেই এসেছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার ২৫০ ডোজ টিকা। আর গত বুধবার পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৬৯ লাখের কাছাকাছি। বর্তমানে দিনে গড়ে চার লাখ করে টিকা দেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসে যার সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা।
গত বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীও বলেন, প্রতি মাসে যাতে এক কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৭০০ ডোজ টিকা সংগ্রহ করা গেছে। সিনোফার্ম থেকে পাওয়া শিডিউল অনুযায়ী অক্টোবর মাস থেকে প্রতি মাসে দুই কোটি হিসাবে ডিসেম্বরের মধ্যে ৬ কোটি টিকা পাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সরকার অল্প দিনের মধ্যে তিন হাজার কোটি টাকার টিকা কিনেছে। অনেক দেশ আছে, যেখানে টিকাদান কার্যক্রম পুরোদমে শুরুই করতে পারেনি, সেখানে আমরা ১০ থেকে ১৫ দিনে সাড়ে ১৬ কোটি টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে আসবে। চীনে এ পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি টিকার অর্ডার দিয়েছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে করোনার তাণ্ডব কিছুটা কমেছে। এটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে দ্রুত টিকাদানের চেষ্টা চলছে। আপাতত টিকাকেই করোনা মোকাবিলার প্রধান হাতিয়ার ভাবা হচ্ছে। এ জন্য একক কোনো মাধ্যমে নয়, যেখানে পারা যায় টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে সরকার। দ্রুত প্রদানে বুথ বাড়ানোর পাশাপাশি জনবলের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রান্তিক পর্যায়ে গিয়ে টিকাদানের সক্ষমতাও দেখে এসেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা আছে। সেটি হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এ জন্য টিকা দেওয়ার বিকল্প নেই। যখন যে টিকা আসছে, দ্রুত দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল, তা দূর হচ্ছে। এই টিকা সংরক্ষণে বিশেষ ফ্রিজের ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি-ইপিআই। ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্যসচিব শামসুল হক বলেছেন, কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে অতি নিম্ন তাপমাত্রার ২৬টি ফ্রিজার দেশে এসেছে। এসব ফ্রিজে প্রায় ৯০ লাখ টিকা সংরক্ষণ করা যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তির কোম্পানি বায়োএনটেকের এই টিকা মাইনাস ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এই তাপমাত্রার কয়েকটি নিম্ন তাপমাত্রার ফ্রিজার আছে কেবল রাজধানী ঢাকায়। নতুন করে এসব ফ্রিজ আসায় সংরক্ষণ জটিলতা অনেকটাই কমে যাওয়ার আশা সংশ্লিষ্টদের।