হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

কনসার্ট ফর বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী আজ

শফিকুল ইসলাম

আজ ১ আগস্ট; দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এর সুবর্ণ জয়ন্তী। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগের এই দিনেই অনুষ্ঠিত হয় কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার জন্য উপমহাদেশের কিংবদন্তি সেতার বাদক রবি শংকরের অনুরোধে এই চ্যারিটি কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন বিশ্বনন্দিত সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন। নোবেল ও অস্কার বিজয়ী বব ডিলানসহ বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী অংশ নিয়েছিলেন সেই ঐতিহাসিক আয়োজনে।

সেদিন একই দিন দুটি কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে দুটি কনসার্ট উপভোগ করেছিলেন ৪০ হাজার মার্কিন দর্শক–শ্রোতা। এ থেকে অর্জিত সব অর্থ তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতে আশ্রিত চরম দুর্দশাগ্রস্ত শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য।

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করলে ইপিআর সদর দপ্তর থেকে তা ট্রান্সমিট করা হয়। তারপরই বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সেই দুঃসময়ে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন প্রায় ১ কোটি শরণার্থী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সীমান্ত খুলে দিয়ে আশ্রয় দেন শরণার্থীদের। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সব রকম সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পাশে এসে দাঁড়ান।

মুক্তিযুদ্ধ যখন মধ্যগগনে, তখন উপমহাদেশের কিংবদন্তি সেতার বাদক রবি শংকরের অনুরোধে বিশ্বনন্দিত সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন দ্য কনসার্ট পর বাংলাদেশের আয়োজন করেন। সে দিনও ছিল রোববার। ঐতিহাসিক এ কনসার্টের আয়োজক জর্জ হ্যারিসন নীল রঙের শার্টের ওপর স্লিভলেস জ্যাকেট পরে মঞ্চে এলে সেখানে উপস্থিত হাজারো মানুষের উচ্ছ্বাস আর করতালিতে ফেটে পড়ে মেডিসন স্কয়ার গার্ডেন। দর্শক ও শ্রোতাদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রথমেই উপভোগ করবেন ভারতের সেতার ও সরোদের যুগলবন্দী।’

এর পর তিনি পণ্ডিত রবি শংকরকে মঞ্চে আসার আহ্বান জানান। রবি শংকর তার টিম নিয়ে মঞ্চে এসে দর্শক শ্রোতাদের প্রণাম জানিয়ে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও ভারতে আশ্রিত শরণার্থীদের দুঃখ দুর্দশার কথা সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তারপর তিনি পরিবেশন করেন ধ্রুপদি সংগীতের বাংলা ধুন। তাঁকে সরোদে সংগত করেন শিল্পী আলী আকবর খান, তবলায় ওস্তাদ আল্লা রাখা ও তানপুরায় কমলা চক্রবতী। তার পর আবারও মঞ্চে আসেন জর্জ হ্যারিসন। তিনি একে এক গাইলেন আটটি গান। বব ডিলান পরিবেশন করেন পাঁচটি গান। একটি করে গান পরিবেশন করেন রিঙ্গো স্টার ও বিলি প্রিস্টন।

এটা এমন সময় ঘটেছিল, যখন মার্কিন সরকার ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধী। শুধু তাই নয়, তারা পাকিস্তানের সহায়তায় সপ্তম নৌ-বহরও পাঠিয়েছিল। এই বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে কনসার্ট ফর বাংলাদেশের মতো একটি চ্যারিটি কনসার্ট আয়োজন ছিল অনেক বড় সাহসী কাজ। এ জন্য জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলান, রবি শংকরসহ সব শিল্পী ও দর্শক শ্রোতা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছেন। বাংলাদেশও তাঁদের মনে রেখেছে। আজকের এই দিনে সেই সংগীত যোদ্ধাদের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানাই সশ্রদ্ধ অভিবাদন।

শফিকুল ইসলাম: বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজশাহী

কতিপয় গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ থেকে অর্থনীতিকে মুক্ত করতে হবে

নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারে কমিশন কী সুপারিশ করল

‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’

টানাপোড়েনের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন

বার্ধক্য শুরু হয় পা দিয়ে

নো ওয়ান কিলড তিন্নি!

শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই

ভ্যাট বৃদ্ধি ও জনজীবনে চাপ

মানুষ কী চায়

শিশুকে কোন স্কুলে ভর্তি করাবেন

সেকশন