সম্পাদকীয়
বিষয়টি কি কাকতালীয়? জায়গার নাম ফাঁসেরটেক বলেই আত্মহত্যার ঘটনা বেশি? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে আত্মহত্যার? জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, রাজধানীর বারিধারাসংলগ্ন নয়ানগর এলাকার একটি অংশের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি। সে জন্য নাকি ওই এলাকাটির নাম হয়েছে ফাঁসেরটেক। পাঁচ দশক আগে গলায় দড়ি দিয়ে একটি কড়ইগাছের সঙ্গে ঝুলে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। সেই থেকে নাকি ফাঁসেরটেক নামটি চালু হয়। এখন পুলিশের নথিসহ সব জায়গায় ওই নামই ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভাটরা থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত ফাঁসেরটেক ও এর আশপাশে ফাঁস দিয়ে ১৪ জন নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, আত্মহত্যার ঘটনাগুলোর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে পারিবারিক কলহ, কোনো ক্ষেত্রে মারধরের শিকার হয়ে, আবার কোনো ক্ষেত্রে মানসিক ভারসাম্যহীনতা থেকে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজানা রহমান মনে করেন, নানা কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ফাঁসেরটেক নামটি কিছুটা হলেও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিতে পারে।
যদি একটি এলাকার নাম মানুষকে আত্মহত্যায় সত্যি কোনোভাবে প্ররোচিত করে, তাহলে সেই নাম পরিবর্তন করা দরকার। কাউকে হত্যায় প্ররোচনা দেওয়া তো অপরাধ। তাই আমরা আশা করব, ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে এবং এলাকাবাসীর সম্মতিসাপেক্ষে ফাঁসেরটেকের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। তার আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ওই এলাকায় আত্মহত্যা রোধে নজরদারি বাড়াতে হবে।
পরিবারে কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকলে বা তৈরি হলে, তার জন্য সঠিক কাউনসেলিং দেওয়াও একটি প্রয়োজনীয় কাজ। এক্ষেত্রে পরিবারের স্বজনদের ভূমিকা প্রধান হলেও সমাজেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আত্মহত্যার ঘটনা দেশে ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২০ সালে আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। একটি জীবন অনেক মূল্যবান। কোনোভাবেই কারও জীবনের অপচয় বা অকাল বিদায় মেনে নেওয়া যায় না। আত্মহত্যার কারণগুলো দূর করার জন্যও সামাজিক সচেতনতা জরুরি। ফাঁসেরটেক নিয়ে সমাজ সচেতন সবারই সক্রিয়তা দরকার।