সম্পাদকীয়
যতই বয়স বাড়ে ততই মানুষের নিজেকে বড় বেশি নিঃসঙ্গ মনে হয়। মাঝেমধ্যে মনে হয়, পৃথিবীতে না এলেই বা কি হতো এমন। কিছু মানুষের পৃথিবীতে আসা নেহাত অকারণে, অপ্রয়োজনে বলে মনে হয়। কারও কোনো কাজে না এলে, কাজে না লাগলে বেঁচে থাকার কোনো মানে হয়! ঘরের অপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে যে অবহেলা-অনাদর কাজ করে, কিছু কিছু মানুষের জীবনটাও এমন। ফুল, পাখি আর প্রকৃতি নিয়ে আরণ্যক মানুষের জীবনটা যেমন নাগরিক হয়ে গেলে বড্ড অসহায় মনে হয়, তখন সে অরণ্যেই ফিরে যেতে চায় ।
নাগরিক সমাজের ঘাত-প্রতিঘাত সংঘাত স্বার্থপরতায় এইসব সহজ মানুষের টিকে থাকা যেন বেঁচে থেকেও না থাকার মতোই। তাঁর সেই উদাস বাউল প্রকৃতি তাঁকে না হতে দেয় একজন ভালো বাবা কিংবা মা, ভালো ভাই কিংবা বোন। এই যে দায়িত্ববোধের ঘেরাটোপ অথবা পরীক্ষা, তাতে কজনই বা পাস করেন! তবু তাঁদের ভেতর স্ত্রী-সন্তানের জন্য ভালোবাসা আছে, আত্মীয়-পরিজনের জন্য মমতা আছে। কিন্তু হৃদয়ের গহিনের সেই সুপ্ত ভালোবাসাটুকু কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। ভালোবাসার সেই দায়িত্বটা তখন বস্তুগত হয়ে ওঠে, নগদে সেটা চাক্ষুষভাবে পেতে চায় সবাই। আমাদের যাপিত জীবনের এই আধুনিক কালটা এতটাই নিষ্ঠুর ও নির্মম।
তাই তো দেখা যায়, যিনি সত্যের পক্ষে অবিচল থাকেন, মিথ্যা ও অজ্ঞানতা তাঁকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয় না। সত্য-মিথ্যার অসম যুদ্ধে সে পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই সত্যের সঙ্গেই কষ্টেসৃষ্টে বসবাস করেন। কবিতার মাঝে যে মানুষগুলো জীবনের সৌন্দর্য খুঁজতে যান, শিল্পচর্চার মধ্যেই জীবনের সৌরভ খুঁজে ফেরেন—গড্ডলিকাপ্রবাহের এই পৃথিবীতে তাঁদের কেউ আপন হয় না। তাঁরা এক-একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের নিঃসঙ্গ মানুষ হয়ে পড়েন। তাঁর কোনো বন্ধু নেই, আত্মীয়-পরিজন নেই, স্ত্রী-পুত্র-সন্তান থেকেও নেই।