সম্পাদকীয়
রেলওয়ের খালাসি পদে নিয়োগ দিতে গিয়ে বাণিজ্য করেছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমেদ। তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে খাওয়াখাওয়িতে অংশ নিয়েছেন আরও ১১ জন রেলওয়ে পদস্থ কর্মকর্তা–কর্মচারী।
কিন্তু তারা শুধু ঘুষ খেয়ে নিজেদের পাদপ্রদীপের নিচে আনেননি। বাহবা দিতে হয়, ঘুষের টাকা দেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা বিনিয়োগ করেছেন। অর্থাৎ মিলেঝিলে ঘুষ খেয়ে সটকে পড়েননি কেউ। একই ধরনের মানসিকতা হওয়ায় একইভাবে টাকাগুলো বিনিয়োগ করেছেন নানা জায়গায়। তাদের এই একাত্মবোধের প্রশংসা করতে হয়। ঘুষ হোক আর যাই হোক, একতাই বল, এই প্রবাদটিকে সত্য প্রমাণিত করেছেন তাঁরা।
এই দেশে একটা সরকারি চাকরি লাভ করা কত যে কষ্টকর সাধনা, সেটা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। কোনো কোনো সরকারি চাকরি আছে, শুরুতে যার বেতন ২০ হাজার টাকারও কম, কিন্তু সে চাকরির জন্য ৫ বা ১০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার কথাও শোনা যায়। এরকম কম বেতনের চাকরির জন্য এত টাকা ঘুষ কেন, প্রশ্ন করা হলে কখনো কখনো শুনতে পাওয়া যায়, পদগুলোর সঙ্গে ঘুষের বেশ একটা মাখামাখি আছে। দু-তিন বছরের মধ্যেই ঘুষ হিসেবে দেওয়া টাকা কড়ায়-গণ্ডায় ফিরিয়ে নিতে তো পারেনই, এরপর ব্যাংক ব্যালেন্সের (অথবা ব্যাংককে ভয় পেলে তোশকের নিচে টাকা ঢুকিয়ে রাখা) রমরমা প্রমাণ করে যে, ঘুষ দেওয়াটা বিফলে যায়নি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ের এক কোটি দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়ে এই বারো কর্মকর্তা-কর্মচারী বুঝিয়ে দিলেন, ঘুষ খাওয়ার জন্য পদে পদে মিল থাকার প্রয়োজন নেই, যেকোনো পদে থেকেই ঘুষের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়া যায়। আজকের পত্রিকার আজকের চট্টগ্রামে গত শুক্রবার প্রকাশিত এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দুদক এই নাটকের কুশীলবদের ধরে ফেলেছে। এরা এদের পরিবারের সামনে কী করে মুখ দেখাবে, এই প্রশ্নটিই হয়তো মনে আসতে পারত।
কিন্তু সমাজকাঠামো আর মূল্যবোধে এমন কিছু পরিবর্তন এসেছে, যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই ঘুষ-দুর্নীতি করে অর্থের মালিক হওয়াকে খারাপ চোখে দেখা হয় না। পরিবারের অন্য সদস্যরা জানেন, পরিবারের নির্দিষ্ট এই সদস্যটি ঘুষের মাধ্যমেই তাদের সুখে রেখেছেন। সুতরাং তারা ভেবে নিতে পারেন, রাখে ঘুষ, মারে কে?
কিন্তু বিধি বাম। মাঝে মাঝে তারা দুদক বা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর অমূল্য সুযোগ পেয়ে যান, যা না পেলেই হয়তো তাঁরা খুশি হতেন।