সম্পাদকীয়
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় কিছু জরুরি বিষয় নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। করোনার প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, বাকি ৮৫ শতাংশ সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু দারিদ্র্যের কশাঘাতে অপুষ্টির শিকার হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে অনেককে। লকডাউনে সচ্ছল ধনী মানুষ তাঁর বড় বাসায় সোশ্যাল ডিসটেন্স মানতে পারবেন, কিন্তু ঝুপড়ি ঘরে থাকা মানুষগুলো লকডাউনে একে অন্যের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হন দিনের বেশির ভাগ সময়।
লকডাউন দিলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর শান্তিতে থাকেন সচ্ছল মানুষ। কিন্তু ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোগা মানুষদের জন্য লকডাউন কোনো শান্তির বারতা আনে না। বরং তাঁরা করোনার ঝুঁকি নিতে রাজি, কিন্তু আশু ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভুগতে রাজি নন। লকডাউনে কলকারখানা খোলা রাখার অনুমতি যাঁরা নিতে পেরেছেন, তাঁরাই আবার প্রণোদনার অর্থ বেশি আদায় করতে পেরেছেন। আর লকডাউনে যাঁদের কলকারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই বঞ্চিত হয়েছেন কোনো রকম প্রণোদনা থেকে।
ধনী দেশগুলোর পক্ষে লকডাউন কার্যকর করা সম্ভব, কিন্তু স্বল্প আয়ের দেশে লকডাউন কার্যকর করা কঠিন। তাই স্বল্পোন্নত দেশে লকডাউন দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো যাবে কি না, ভাবতে হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টানা বন্ধ থাকার ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে, তা এখন থেকেই ভাবতে হবে, পরিকল্পনা নিতে হবে। দেশে ধনী-দরিদ্রের যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই পরিকল্পনা করতে হবে। লকডাউন ধনীবান্ধব, দরিদ্রবান্ধব নয়। সরাসরি খাদ্যসহায়তা দিয়ে অতি দরিদ্রদের হয়তো বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব, কিন্তু ছোট ছোট শিল্প উদ্যোগগুলো ধ্বংস হলে সেগুলো আবার গড়ে তোলা মুশকিল। জীবন-জীবিকার সমন্বয়ে বাঁচতে হলে ভাবতে হবে, এখনই নিতে হবে অন্তত এক বছরের সার্বিক পরিকল্পনা। নয়তো বারবার লকডাউনের অপচয়ে পড়বে অর্থনীতি, ক্ষতির বোঝা আরও বাড়বে।
করোনাভাইরাসের কারণে গত এক বছরে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। দ্বিতীয় দফার আঘাতে এটা আরও বাড়বে। তাই আবেগমুক্ত হয়ে পথরেখা তৈরি করতে হবে এখনই।