সম্পাদকীয়
অনেকেই মনে করেন, মানুষের মুখ মনের আয়না। মহাবিশ্ব প্রথমে মূর্ত হয় মানুষের মনে। মন মূর্তিমান হয় মুখে। আবার একটি গান আছে, ‘মুখ দেখে ভুল কোরো না, মুখ তো নয় মনের আয়না!’
একজন লিখেছেন—বাতাসের চঞ্চলতা, চাঁদের আলো, সূর্যের কিরণ, সমুদ্রের স্বপ্ন, পর্বতের নীরবতা—সবই রয়েছে মানুষের মুখে। সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে রহস্যজনক হচ্ছে মানুষ, আর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যজনক হচ্ছে তার মুখ।
মানুষের মুখে উপস্থিত গোটা মহাবিশ্ব। এত ক্ষুদ্র পরিসরে এত বিরাটের বিচিত্র প্রকাশ বিস্ময়কর! একই রকম দুটি মুখ নেই পৃথিবীতে। প্রতিটি মুখ থেকে বিচ্ছুরিত হয় একেক রকম শক্তির স্পন্দন। এক রহস্যময় জগৎ লুকিয়ে থাকে প্রতিটি মুখের অন্তরালে। মুখে হাসি মানে, সেই রহস্যময় অন্ধকার জগতে আলোর ঝিলিক।
মানবদেহ মাটি পানি অগ্নি বায়ু আকাশের মতোই প্রাচীন। মানুষের পা মাটির সঙ্গে সংযোগ রাখে। মুখ স্বাভাবিকভাবেই মাটির অধিরোহণ দেহের চূড়া।
মুখের নগ্নতা একদিকে জগৎ থেকে তথ্য ও শক্তি সঞ্চয় করে, অন্যদিকে ভেতরের জ্ঞান ও শক্তি জগতের কাছে তা প্রকাশ করে। মুখ হলো জীবন ও জগতের সন্ধিস্থল। এক জন অপরজনকে দেখছে মানে, তার মুখ দেখছে। মানুষ পছন্দ করে মুখ। ভালোবাসে মুখ। মানুষের হৃদয়ে ছাপ ফেলে মানুষের মুখ।
মানসপটে ভেসে ওঠে মুখচ্ছবি। মানবদেহের সবচেয়ে শিক্ষিত অঙ্গই হলো মুখ। সারা দেহ ঢাকা থাকে, কিন্তু মুখ থাকে উন্মুক্ত।
সেই মুখ এখন মুখোশ দিয়ে ঢেকে না রাখলে বেতের বাড়ি! জরিমানা!! জেলও হতে পারে। করোনাভাইরাসের কারণে এখন মানুষকে মুখই আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখতে হচ্ছে। মাস্ক পরে মুখ ঢেকে নিরাপদ থাকার এই চেষ্টা অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর। তারপরও জীবন আগে। তাই মুখ দেখে মানুষ চেনার চেয়ে মুখ ঢেকে জীবন বাঁচানোই শ্রেয়।