সম্পাদকীয়
করোনার দ্বিতীয় দফার আক্রমণে নাকাল অবস্থা। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। দিনে গড়ে ৭০ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সংক্রমণের হারও বাড়ছে। পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু যুৎসই বা কার্যকর ফলদায়ী উপায় পাওয়া গেছে বলে মনে হয়। নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা চলছি।
১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের কথা শোনা যাচ্ছে। একদিকে বলা হচ্ছে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে, অন্যদিকে শিল্পকারখানা খোলা রাখার কথাও শোনা যাচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তাহলে শিল্পকারখানার শ্রমিকদের যারা দূরে থেকে আসা-যাওয়া করেন, তাদের কী হবে? কঠোরতা না দেখালে আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত বিধি-বিধান মানতে চান না।ঢিলেঢালা লকডাউনে যে কোনো উপকার পাওয়া যায় না, সে অভিজ্ঞতা তো আমাদের এরই মধ্যে হয়েছে। সরকারকে দিন সাতেকের জন্য অন্তত কঠোর নীতি নেওয়ার পরামর্শ অনেকেই দিচ্ছেন। আসলে কী করা হবে, তা ১৪ এপ্রিল এলেই বোঝা যাবে।
করোনার শুরুতে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের নানা ত্রুটি-দুর্বলতার চিত্র সামনে এসেছিল। আমাদের বড় সমস্যা, প্রায় সব ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম। স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনের তুলনায় বাজেট বরাদ্দ কম। আবার যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা-ও যথাযথ ব্যবহার হয় না। সাধারণ মানুষের কাছে সুফল পৌঁছে না। কিছু বড় দুর্নীতি-অনিয়মের খবর প্রকাশের পর আশা করা হয়েছিল, সরকার দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দেখাবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র আশাজাগানিয়া নয়।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি বড় নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় বড় দুর্নীতি হয়েছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। বড় অঙ্কের ঘুষবাণিজ্যের খবর জানার পরও ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল না করে একটি জোড়াতালির সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষায় অস্বাভাবিক ভালো নম্বর পেয়ে মৌখিক পরীক্ষায় খারাপ করছেন প্রার্থীরা। এই দুর্নীতির সঙ্গে কারা জড়িত, তা একেবারে অজানা না হলেও তাদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে না। এক জায়গা থেকে সরিয়ে আরেক জায়গায় পদায়ন যদি হয় অপরাধের শাস্তি, তাহলে অপরাধ না কমে বাড়তেই থাকবে। বজ্র আঁটুনি ফসকা গেড়ো বলে একটি কথা আছে। দুর্নীতি-অনিয়মের ব্যাপারে মনোভাব যদি সে রকমই হয়, তাহলে আর অনাচার বন্ধ হবে কীভাবে?