সম্পাদকীয়
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এককালীন সন্মানী দেওয়ার জন্য অর্থ ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের বিশেষ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্য থেকে দুই দফায় ২৫ কোটি টাকা সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। বাজেট বরাদ্দের আট মাস পর এই সম্মানী দেওয়া হলেও ‘স্বাস্থ্যকর্মী’র সংজ্ঞা স্পষ্ট না হওয়ায় টেকনিশিয়ান, অফিস সহকারী ইত্যাদি পদের লোকজন এই সম্মানী পাচ্ছেন না বলে খবর বেরিয়েছে।
২৮টি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নামে অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসক ১ হাজার ৮৮০ জন, নার্স ৮৪৫ জন এবং স্বাস্থ্যকর্মী ১ হাজার ৫০৭ জন। তবে অর্থ বিভাগ থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে জানানো হয়েছে, আউটসোর্সিং বা অন্য কোনোভাবে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এ সন্মানী পাবেন না।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বা বিএমএর মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর বাকি কাজটা মন্ত্রণালয় করবে, এটাই স্বাভাবিক। এতদিন পর টাকাগুলো দিচ্ছে, কিন্তু সবাই পাবেন না–এটা আহত করল। সব শ্রেণির লোক নিয়েই তো হাসপাতাল। হাসপাতালে যখন একজন রোগী আসেন এবং দৌড়ে গিয়ে প্রথম যে লোকটি রোগীকে ট্রলিতে তোলেন, তাকে সম্মানী না দেওয়া মানেই হচ্ছে–এখানে ভেদাভেদ করা হচ্ছে। নীতিনির্ধারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত লোকজন না থাকলে এমনটাই হবে। বিশেষ অবস্থায় দায়িত্ব পালনের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য সম্মানীর ব্যবস্থা করা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও যারা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছেন, তাদের জন্য আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা একটি ভালো উদ্যোগ।
আমরা চাইব, স্বাস্থ্যখাতে নিয়োজিত সব ব্যক্তির মাঝেই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সম্মানীর টাকা ন্যায্যতার নীতিতে বিলি করা হোক। কে কেমন দায়িত্ব পালন করেন, তা না দেখে বিশেষ মানুষকে সুবিধা দেওয়ার নীতি নিলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ সম্মানী দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি পরিচ্ছন্ন এবং সবার কাছে গ্রহণীয় নীতি নেওয়াই উত্তম। এ ক্ষেত্রে ভেদাভেদ করলে তা অনেককে দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত করতে পারে।