বিপিএল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে
বিপিএলের মতো বড় টুর্নামেন্ট কাভার করতে যেকোনো সংবাদকর্মীকে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। কিন্তু এবার যেন দেশের ক্রিকেট সাংবাদিকদের একটু বেশি ব্যতিব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন ‘গরম-গরম নিউজ’ ছড়িয়ে পড়ছে দাবানলের মতো। আর বিপিএল যে ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক সংবাদের কারণে বেশি আলোচিত, তা আর নতুন করে বলার আছে? এবারের টুর্নামেন্ট নেতিবাচক সংবাদ শিরোনামে আগের সব বিপিএলকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে রাখছে। এবার যেখানে ‘অন্য রকম বিপিএল’ করার ঘোষণা দিয়েছিল বিসিবি, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র।
গতকালকের কথাই বলা যাক, চিটাগংয়ের বিনুরা ফার্নান্দো ধারাবাহিক ভালো বোলিং করেও চিটাগং কিংসের একাদশ নেই। লঙ্কান পেসারকে রাখা হয়নি ১৫ জনের স্কোয়াডে। খেলা শুরু হতেই ছড়িয়ে পড়ে নানা গুঞ্জন। পারিশ্রমিক নিয়ে চরম বিতর্কের মধ্যে বিনুরা কি তবে নতুন সংযোজন? ম্যাচ শেষে দলের ম্যানেজার মোহাম্মদ লাবলুর রহমান বলেন, ‘এ রকম (পারিশ্রমিক ইস্যু) কিছু না। নতুন একজন এসেছে, হুসাইন তালাত। ওই কারণে ওকে (বিনুরা) রাখিনি। পারিশ্রমিকের কোনো সমস্যা নেই। ওর (বিনুরা) যে চুক্তি, ৫০ শতাংশ আগেই দিয়েছি।’
এই পারিশ্রমিক ইস্যুতে এবার বিপিএল যেন ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। খেলোয়াড়দের প্রতিশ্রুত পারিশ্রমিক পরিশোধ নিয়ে অস্পষ্টতা বিপিএলকে তামাশা আর বিভ্রান্তির লিগে পরিণত করেছে। একই সময়ে আয়োজিত বিগ ব্যাশ, আরব আমিরাতের টি-টোয়েন্টি লিগ কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টি-টোয়েন্টিতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার নিয়ে বসে থাকে, সেখানে বিদেশি তারকা ক্রিকেটাররা টাকাপয়সার ঝামেলাপূর্ণ বিপিএল খেলতে আসবেন কোন দুঃখে? কাল গুঞ্জন ছড়িয়েছে, পারিশ্রমিক ইস্যুতে বিতর্কিত দুর্বার রাজশাহীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক রহমানকে নাকি হোটেলে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তিনি পরে এক বিবৃতিতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। দুই দিন আগে রাজশাহীর আকস্মিক অধিনায়ক বদল নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা এনামুল হক বিজয়কে নাকি ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনোযোগ দিতে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুধু পারিশ্রমিক ইস্যুতে নয়, টুর্নামেন্টের প্রতিটি স্তরে অপেশাদার আচরণের দৃষ্টান্ত মিলবে এবারের বিপিএলে। কদিন ধরে ফিসফাস চলছে খেলার চেতনার পরিপন্থী সন্দেহজনক কার্যকলাপ নিয়ে। গত পরশু ফিক্সিং ইস্যু নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আজকের পত্রিকায়। ‘আতশি কাচের নিচে চল্লিশের বেশি ক্রিকেটার’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি বেশ আলোচিত হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর চলমান বিপিএলের সন্দেহজনক কার্যকলাপ নিয়ে একাধিক সাবেক অধিনায়ক বিষয়টি নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আজকের পত্রিকার কাছে। একজন ক্ষোভ নিয়ে বললেন, ‘চল্লিশ ক্রিকেটারের মধ্যে অন্তত চারজনের বিরুদ্ধেও যদি প্রমাণ মেলে, তাঁদের আজীবন নিষিদ্ধ করা উচিত। বাকি ক্রিকেটারদের যেন সামনের ড্রাফটে না রাখা হয়।’ আরেক সাবেক অধিনায়ক হতাশ কণ্ঠে বললেন, ‘এটা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ক্রিকেটটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বাঁচান! পছন্দের কোচিং স্টাফ, ম্যানেজমেন্ট রাখে নিজেদের এসব কার্যকলাপ বাস্তবায়ন করতে।’
অনেকের প্রশ্ন, বিপিএলের শৃঙ্খলা ফেরাতে গভর্নিং বডি কী করেছে? গত ছয় মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চলছে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে। অতীতে বিপিএল গভর্নিং বডি যতটুকু সক্রিয় থাকত, এবার সেটাও দেখা যাচ্ছে না। বিশৃঙ্খল বিপিএলে তাই খেলার চেয়ে তামাশাই তো বেশি হবে।