বিপিএল মানে কেউ বলে ‘বিশৃঙ্খলা প্রিমিয়ার লিগ’, কেউবা বলে ‘বিতর্কিত প্রিমিয়ার লিগ’। ফারুকের নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট বোর্ড এবার অন্য রকম বিপিএলের ঘোষণা দিলেও বিতর্ক আর পিছু ছাড়ল কোথায়! রাজশাহী দলের খেলোয়াড়দের বকেয়া পারিশ্রমিক ইস্যু, বিসিবি পরিচালকদের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন, টিকিট নিয়ে বিশৃঙ্খলা, কনসার্ট আয়োজনে বিপুল ব্যয় নিয়ে সমালোচনা—সব মিলিয়ে বিপিএল এবারও মাঠের খেলার চেয়ে যেন বিতর্কের মঞ্চই হয়ে উঠেছে।
রাজশাহী দলের খেলোয়াড়দের বকেয়া পারিশ্রমিক না দেওয়ায় অনুশীলন বাতিলের খবর চাউর হয়। আর এতেই চট্টগ্রামের র্যাডিসন ব্লু হোটেলের সামনে সংবাদমাধ্যমের ভিড়, খেলোয়াড়দের উদ্বেগ এবং বিসিবির অস্থিরতা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। দলটির ক্রিকেটাররা কাল রাতের বৈঠকের পর নিজেদের করণীয় ঠিক করবেন বলে জানা গেছে। আজ রাজশাহীর ক্রিকেটারদের অনুশীলন করার কথা। তবে বিকেলের মধ্যে টাকা না পেলে তাদের পরদিনের ম্যাচ (সিলেটের বিপক্ষে) নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাল বিকেলেই বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ চলে আসেন টিম হোটেলে।
রাতে সভা শেষে বোর্ড পরিচালকদের পক্ষে সংবাদমাধ্যমকে মনজুর আলম বলেন, ‘চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করি কালকের (আজ) মধ্যে সমাধান চলে আসবে। বিসিবি সভাপতি নিজেই চেষ্টা করছেন দলের স্বত্বাধিকারী, খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে। আশা করি কালকের (আজ) মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সুন্দর সমাধান হবে। কাল (আজ) ওদের মালিক এলে সমাধান হয়ে যাবে। তখন বিসিবি সভাপতি আপনাদের বিস্তারিত জানাবেন। আশা করি ক্রিকেটাররা টাকা পাবেন। এটা আসলেই বিব্রতকর।’
সমস্যার শুরু মাঠে খেলা গড়ানোর আগেই। বিসিবি এবার বিপিএল আয়োজনই করছে আগেরবারের তুলনায় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক কমিয়ে। অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি এখনো গ্যারান্টি মানি পরিশোধ করেনি।
বিপিএলের শুরুর দিনে টিকিট নিয়ে অব্যবস্থাপনা, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ফটক ভাঙচুরসহ আরও কিছু ঘটনায় বিসিবি সভাপতি ফারুক ও পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মধ্যে সম্পর্কের অবনতিও সামনে এসেছে। ফাহিম এক সাক্ষাৎকারে বোর্ড সভাপতির দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন এবং কাজের পরিবেশের অভাবে পদত্যাগের ভাবনার কথা জানান। বিসিবি সভাপতি অবশ্য এই অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, ফাহিম পদত্যাগের কথা বলেননি, বরং কাজের চাপের কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বোর্ডে নতুন যারা, তাদের কাজের পরিমাণ অনেক। ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে মাত্র।’ তবে এই বিতর্ক বোর্ডের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।
এবারের বিপিএলকে ‘রান উৎসবের টুর্নামেন্ট’ বলা হচ্ছে। সিলেট ও ঢাকার পর্বে একাধিক হাই স্কোরিং ম্যাচ দেখা গেলেও ছোট বাউন্ডারি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনাও হচ্ছে। ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল পর্যন্ত বলেছেন, ‘সীমানা আরও বড় করা উচিত, যাতে বোলারদের জন্য কিছু সুযোগ থাকে। মাঠে জায়গা থাকলেও সীমানা ছোট রাখা হচ্ছে, যা বোলারদের প্রতি অবিচার।’
প্রশ্ন উঠেছে এবার আম্পায়ারিং নিয়েও। সিলেটে খুলনা টাইগার্স অভিযোগ করেছে বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে। বিপিএলকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ফেলেছে বিসিবি। উচ্চ পারিশ্রমিকে বিদেশি শিল্পী এনে কনসার্ট আয়োজন করায় সমালোচনার মুখেও পড়েছে বিসিবি।