নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীর সৌজন্যে বনানীর হোটেল শেরাটনও বিশেষ পরিচিতি পেয়ে গেছে গত কয়েক দিনে। কাল হোটেল লবিতে রাজশাহীর যে ক্রিকেটারের সঙ্গেই দেখা, সবার মুখটা কেমন মলিন দেখাল। অথচ তাঁরা টানা তিন ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের তিনে উঠে আশা জিইয়ে রেখেছেন প্লে-অফের। মাঠের পারফরম্যান্সে ‘দুর্বার’ হলেও ক্রিকেটাররা ‘দুর্বল’ বা কাহিল হয়ে পড়েছেন বারবার চেক বাউন্সের ঘটনায়! সাফল্য আর বিতর্ক—দুটিই সমানতালে চলছে দলটিতে।
রাজশাহীর মালিকপক্ষের দেওয়া চেক বারবার বাউন্স করছে। গতকালও রাজশাহীর চেক বাউন্স করেছে। এতে টাকা যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে না, তেমনি ক্রিকেটারদেরও হতাশা বাড়ছে। দামি চেকটা শুধুই একটা কাগজ ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না ক্রিকেটারদের কাছে। তাঁরা দুপুর-সন্ধ্যায় খেতে পর্যন্ত যাচ্ছেন চিন্তা নিয়ে। খেতে তো হচ্ছে নিজের পকেটের টাকায়। দৈনিক ভাতাও (ডিএ) যে মিলছে না।
রাজশাহীর টিম হোটেলে একাধিক ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলটির ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকপক্ষ একাধিকবার চেক দিয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই তা বাউন্স করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রিকেটার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বোঝেনই তো কী অবস্থা! এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়িনি। খেলতে এসেছি, অথচ এখন চেক নিয়ে ব্যাংক থেকে ব্যাংকে ঘুরছি। চেকের পর চেক দিচ্ছে, কিন্তু এক টাকাও পাচ্ছি না। এটা সরাসরি প্রতারণা। আমরা পেশাদারত্ব ধরে রেখে জয় এনে দিচ্ছি, কিন্তু মন থেকে সত্যিই ভেঙে পড়েছি। আমরা মাঠে খেলব নাকি ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে চেক ক্যাশ করার চেষ্টা করব?’
বিষয়টি শুধুই আর্থিক নয়, মানসম্মানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে খেলোয়াড়দের কাছে। প্রতিদিন একটা দল যদি পারিশ্রমিক ইস্যুতে আলোচনায় থাকে, সেই দলের কোনো খেলোয়াড়ের কাছে তা মোটেও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। দলটির বিদেশি ক্রিকেটাররাও চরম হতাশ। দলের অন্যতম সেরা পারফরমার জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার রায়ান বার্ল যেন নিন্দা জানানোর ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। রাজশাহীর লিগ পর্ব শেষ, এ ফাঁকে বার্ল কাল বেরিয়েছিলেন গলফ খেলতে। গলফ খেলেও মনটা যেন হালকা হয়নি তাঁর। সন্ধ্যায় পারিশ্রমিক নিয়ে ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা নিয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বললেন, ‘এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আমরা পেশাদার খেলোয়াড়, কিন্তু আমাদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করা হচ্ছে। প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারবার প্রতারণা করছে ম্যানেজমেন্ট। এটি শুধু বিব্রতকর নয়, আমি একে অপরাধ বলব।’ বার্ল আরও যোগ করলেন, ‘আমরা মাঠে সাফল্য এনে দিচ্ছি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে মনোযোগ ধরে রাখা খুব কঠিন। ভাবছি, শেষ পর্যন্ত নিজের টাকায় ফ্লাইটের টিকিট কেটে দেশে ফিরতে হবে কি না।’
চাপের মুখে রাজশাহী এখন পর্যন্ত ২০-২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক দিয়েছে খেলোয়াড়দের। অথচ লিগ পর্ব শেষেই ৭৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা ছিল। তাঁদের ডিএ বকেয়াই (দৈনিক ভাতা গড়ে ৫০ ডলার) ছিল ১৮ দিনের। রাতে জানা যায়, অবশেষে ডিএ নাকি ক্রিকেটাররা পেয়েছেন। হোটেল বিল পরিশোধ ঠিকঠাক করতে না পারায় দুর্বার রাজশাহীর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে একাধিকবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। অথচ তিনিই গত পরশু সিলেটের পক্ষে জিতে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গালভরা বুলি আওড়েছেন। রাজশাহীর মালিক ঘোষণা দিয়েছেন বোনাস দেওয়ার। যে দল ঠিকঠাক খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকই দিতে পারে না, যাদের ঘন ঘন চেক বাউন্সের মতো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে, বিপিএলের ভাবমূর্তি মাটিতে মিশে গেছে, সেখানে বোনাসের ঘোষণাকে বাগাড়ম্বর ছাড়া আর কী বলা যায়?