চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে পণ্যবাহী একটি জাহাজ থেকে সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চর নামক স্থানে নদীতে থেমে থাকা ওই জাহাজ থেকে গতকাল সোমবার বিকেলে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ। এ ঘটনায় গুরুতর আহত একজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এফবি আল-বাখেরাহ নামের জাহাজটি মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন। জাহাজটি চট্টগ্রামের কাপ্তাই থেকে সার নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী যাচ্ছিল। পুলিশের ধারণা, জাহাজটি ডাকাতের কবলে পড়েছিল।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন জাহাজের মাস্টার কিবরিয়া, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজীবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। গুরুতর আহত ব্যক্তির নাম জুয়েল। হতাহত সবার বাড়ি নড়াইলে।
মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের অন্য জাহাজ মুগনি-৩-এর মাস্টার বাচ্চু মিয়া ও গ্রিজার মো. মাসুদ জানান, সার বহনকারী আল-বাখেরাহ গত রোববার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে। এরই মধ্যে কোম্পানির মালিক শিপন বাখেরাহ জাহাজে ফোন করে কাউকে পাননি। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকায় মুগনি জাহাজ থেকে যোগাযোগ করার জন্য বলেন তিনি। ওই সময় মুগনি জাহাজটি মাওয়া থেকে ঘটনাস্থল দিয়ে অতিক্রম করার সময় বাখেরাহ জাহাজটি দেখতে পায়। ওই সময় তারা জাহাজের লোকদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন।
এদিকে ৯৯৯-এ কল পেয়ে চাঁদপুর থেকে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ সদস্যরা জাহাজ থেকে প্রথমে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেন এবং তিনজনকে আহত অবস্থায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আনিসুর রহমান বলেন, হাসপাতালে আনা তিনজনের মধ্যে সজীবুল ও মাজেদুলকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাঁদের মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গুরুতর আহত জুয়েলের গলা ও শ্বাসনালি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কাটা ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, জাহাজে ডাকাতি করতে বাধা দেওয়ায় তাঁদের হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, আহত একজন হাতের ইশারায় জানিয়েছেন, তাঁরা আটজন ছিলেন। ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ডাকাতি কিংবা অন্য কোনো কারণে হতে পারে। তদন্তের পর জানা যাবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন
বাসস জানায়, চাঁদপুরে সারবাহী জাহাজে ডাকাতের আক্রমণ এবং ক্রুদের হত্যাকাণ্ড ও আহতের ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। গতকাল মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক এবং যুগ্ম সচিবকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এই কমিটিকে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও দায়দায়িত্ব নিরুপণ, অনুরূপ ঘটনা রোধে ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণপূর্বক সুস্পষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।