মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
সাপ্তাহিক দুই দিন ছুটির সঙ্গে রোববার ছুটি নিয়ে অনেক চাকরিজীবী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চার দিন ছুটি ভোগ করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে এই লম্বা ছুটি কাটাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ছুটেছেন। বর্তমানে সৈকত ও আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমেছে পর্যটকদের। হোটেল-মোটেলগুলোর কক্ষও শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকদের আনাগোনা অব্যাহত থাকবে। শহরের অভিজাত ও মাঝারি মানের হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজের কক্ষ আগাম বুকিং চলছে। অনেক হোটেলের চলতি মাসের বুকিং শেষ হয়ে গেছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সৈকত পর্যটকে ভরা। কলাতলী ও লাবণি পয়েন্টেও পর্যটকের ভিড় ছিল। সৈকতে অনেকেই বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে ঘোড়ায় চড়ে, ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকে চড়ে সমুদ্র দর্শনে মেতেছেন। কিছু পর্যটক নোনা জলে স্নান করতে নেমে আনন্দ উপভোগ করছেন। জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাখো পর্যটক সমুদ্র দর্শনে এসেছেন।’
ঢাকার কল্যাণপুর থেকে সপরিবারে এসেছেন চাকরিজীবী আবিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। রোববার অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। এই তিন-চার দিনের ছুটিতে কক্সবাজার এবং সেন্ট মার্টিন ঘোরার পরিকল্পনা করেছি।’ তাঁর মতো অনেকেই পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন। পর্যটকরা মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক পাথুরে সৈকত, টেকনাফ, রামুর বৌদ্ধপল্লী, শৈলদ্বীপ মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরছেন।
শৈবাল ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, এখন অনেকেই ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণ করছেন। পরিস্থিতির কারণে পরবর্তী কয়েক মাস বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকদের চাপ থাকবে।
কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ৫০০ হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট রয়েছে। যেখানে ১ লাখ ৫০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা আছে। কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ হোটেল-মোটেল এবং রিসোর্টের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। বেশির ভাগ হোটেল এখন ৯৫ শতাংশ বুকিং পেয়ে গেছে। পর্যটকের চাপের কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
সেন্ট মার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, আজ প্রথমবার ২ হাজার পর্যটক নিয়ে চারটি জাহাজ সেন্ট মার্টিন গেছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজগুলোতে শতভাগ আসন বুকিং থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে শহরে বাড়তি পর্যটকের চাপের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। শহরের প্রধান সড়ক, মেরিন ড্রাইভ ও কলাতলী হোটেল-মোটেল সড়কগুলোতে পর্যটক ও পথচারীরা দীর্ঘ সময় আটকে পড়ছে। এ ছাড়া পর্যটন জোনের সুগন্ধা এবং কলাতলী সৈকতের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে হাজার হাজার দোকান বসেছে, যা পর্যটকদের চলাফেরায় চরম ভোগান্তি তৈরি করেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ভ্রমণের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।