নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ঈদে ঘরমুখী মানুষকে একপ্রকার জিম্মি করে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় মিরপুর ১৪ নম্বর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত কনস্টেবল আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা হয় মহাখালী বাস টার্মিনালে। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে নেত্রকোনায় যাবেন। বাস টার্মিনালের হযরত শাহজালাল বাস কাউন্টারে এসে দেখেন ৪০০ টাকার ভাড়া ৮০০ টাকা হয়ে গেছে। পরে একজন পুলিশ সদস্যের হস্তক্ষেপে তিনি অপর একটি বাসে ৬০০ টাকায় টিকিট কাটেন।
আজ সকালে হযরত শাহজালাল বাস কাউন্টারের সামনে অপেক্ষমাণ নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুসহ প্রায় ৫০ জনকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তাঁরা সবাই নেত্রকোনায় যাবেন। কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ। এ সময় কাউন্টারের সুপারভাইজার কুটু একজন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। এ সময় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার উপসহকারী পরিদর্শক আব্দুস সালাম টিকিট ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেন।
কুটু বলেন, ‘চালক না গেলে আমার কিছু করার নেই। তাঁরা ৮০০ টাকার কমে যেতে রাজি নয়।’ এ সময় পাশে থাকা একজন গাড়ির সহকারী বলেন, ‘সারা রাত কষ্ট করে ঢাকায় এসেছি যানজট ঠেলে। এখন ৮০০ টাকার কমে আমরা যাব না।’
পুলিশ কর্মকর্তাও কুটুকে টিকিট ছাড়ার অনুরোধ করেন। কিছুক্ষণ পর কুটু একজনকে ফোন দেন। এরপর কাউন্টারের ভেতরে ঢুকে ৬০০ টাকা মূল্যে টিকিট বিক্রি শুরু করেন। যদিও ভাড়া ৪০০ টাকা। তবে বাসের সহকর্মী হুংকার দিয়ে বলেন, ‘ভাড়া ২০০ টাকা কম নিয়েছি। এখন দাঁড়িয়ে যাত্রী নিলে কেউ কিছু বলতে পারবেন না।’
আব্দুল গনি গার্মেন্টস কর্মী। তিনি নেত্রকোনায় যাবেন। দাঁড়িয়ে যাওয়ার একটি টিকিট সংগ্রহ করেন ৬০০ টাকায়। শুধু আব্দুল গনি নন, তাঁর মতো কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাসে।
একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়া। এসব ভোগান্তি মাথায় নিয়ে যাত্রীরা স্বজনদের টানে ছুটে যাচ্ছেন গ্রামে।
বাসে টিকিট না ছাড়া এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ বাসমালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েতুল্লাহ খন্দকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তেজগাঁও বিভাগের কমিশনারকে কল দেওয়া হলে তিনিও কল কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, এবার বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেওয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারি কোনোই কাজে বা আমলে নেননি বাসমালিক বা শ্রমিকেরা। তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকাতেই আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।