নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে আজ শুক্রবার বিকেলে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে গোটা হাতিরঝিল। নানা বয়সী মানুষ হাতিরঝিলের লেকের পাশে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এ নৌকা বাইচের আয়োজন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ রোয়িং ফেডারেশন।
হাতিরঝিলের উত্তর-পূর্বদিকের পুলিশ প্লাজার পাশের সেতুর নিচ থেকে আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয়ে মহানগর-২ সেতুর কাছে গিয়ে শেষ হয় নৌকাবাইচ। এ সময় দর্শকেরা চিৎকার দিয়ে নৌকাবাইচে অংশ নেওয়া দলগুলোকে সমর্থন ও উৎসাহ দিতে থাকেন।
পুলিশ প্লাজার পাশের সেতুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা জাহিদ হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নৌকাবাইচ হবে শুনে দেখতে এলাম। খুবই ভালো লাগছে। আমার বাড়ি কুমিল্লায়। ছোটবেলায় গ্রামে নৌকাবাইচ দেখেছি। অনেক দিন পর আবার দেখে অনেক ভালো লাগল।’
অ্যাডভোকেট ইলিয়াস হোসেন ৪ বছরের মেয়ে সারাকে নিয়ে সপরিবারে এসেছেন নৌকাবাইচ দেখতে। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় বগুড়ায় থাকতে একবার নৌকাবাইচ দেখেছিলাম। বহু বছর পর দেখে অনেক ভালো লাগল। তবে পুরস্কারের ধরন ও পরিমাণ আরও বড় আকারের হওয়া উচিত ছিল। আরও বড় পরিসরেও কিন্তু আয়োজন করা যেত।’
এহসান, জায়নদের মতো ৫-৬ বছরের শিশুরাও উপভোগ করেছে নৌকাবাইচ। খেলা দেখতে অনেক ভালো লেগেছে জানিয়ে জায়ান বলেছে, ‘আমার তো অনেক ভালো লাগল।’ তোমার কেমন লাগল? এমন পাল্টা প্রশ্নও ছিল তার।
নৌকাবাইচ উপলক্ষে হাতিরঝিলের অ্যাম্পি থিয়েটার বা মুক্তমঞ্চে কিছুক্ষণ পর পরই ঘোষণা করা হচ্ছিল দলগুলোর নাম এবং কে কি রকম পারফরমেন্স করছিল। আর সঙ্গে ব্যান্ড পার্টির তালে তালে নেচে গেয়ে উৎসবে মেতেছিলেন দর্শকেরা। বাদ যাননি বিদেশি দর্শকেরাও। চীনের নাগরিক ফ্রাঙ্ক ইয়ান মুক্তমঞ্চের দর্শক গ্যালারিতে বসে নৌকাবাইচ উপভোগ করছিলেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছি। আমার বন্ধু চাক টান প্রথমবারের মতো এসেছে বাংলাদেশে। ওকে নিয়ে এই মঞ্চের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি অনেক মানুষের ভিড় ও লাল কার্পেট বিছানো। লোকজনকে জিজ্ঞেস করতেই বলল খেলা হবে। এই ধরনের খেলা এর আগে দেখিনি। খুবই মজা লেগেছে খেলা দেখে।’ তবে খেলায় একটা দলকে শুধু একটি টেলিভিশন দেওয়া হবে শুনে কিছুটা অবাক হয়ে বলেন, ভেবেছিলাম দলের প্রত্যেকের জন্য একটি করে টেলিভিশন দেওয়া হবে।
বিজয়ী দল আলী নগর রোয়িং ক্লাবের সদস্য মহিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাতিরঝিলের নৌকাবাইচের আয়োজনে গত দশ বছর ধরে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এবারও চ্যাম্পিয়ন হয়ে খুবই ভালো লাগছে। গতবার ভারতকে হারিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। তবে আরও বড় পরিসরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ আয়োজন হলে ভালো হতো। আশা করব সামনের বছর এ বিষয়গুলোতে আয়োজকেরা নজর দেবেন।’
নৌকাবাইচ শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান মিঞা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী রায়হানুল ফেরদৌস, বাংলাদেশ রোয়িং ফেডারেশনের চেয়ারম্যান মোল্লা মোহাম্মদ আবু কায়সারসহ অন্যান্য অতিথিরা।