জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শাখা ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিতে পদ না পাওয়া আন্দোলনরত একদল নেতা-কর্মী বলেছেন, তাঁদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অশান্তির দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য একটি ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপ কাজ করছে। যদি ক্যাম্পাসে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহলে বর্তমান এই অযোগ্য কমিটিকে এর দায়ভার নিতে হবে।
আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন শাখা ছাত্রদলের আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা ফের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তির দাবি জানান।
এ সময় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সবুজ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পড়ে শোনান। সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল মাথা উঁচু করে লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে এক বৈষম্যহীন ছাত্রসমাজ ও শিক্ষার্থীবান্ধব সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতির সূচনা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতিকে যেভাবে দেখতে চায় ঠিক সেই লক্ষ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যখন আমরা সবাই বৈষম্যের জন্য লড়তেছি ঠিক এই সময় ২৪ ডিসেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ কর্তৃক ৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলনের উদ্দেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ওই কমিটিকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে নানান অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অসংগতিগুলো হলো—
১. ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতৃবৃন্দকে উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারিতামূলকভাবে তুলনামূলক কম সক্রিয়, নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্য এমনকি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ থেকে বিপ্লবোত্তর সময়ে ছাত্রদলে আসা কর্মীদের পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩-১৪ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সব নেতা-কর্মীকে তথাকথিত কমিটিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে স্থান দেওয়া হয়নি। চাকরিজীবী, বিবাহিত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদায়ন করে ত্যাগীদের চরমভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
২. বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, জুলাই বিপ্লবে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব ছাত্রসংগঠনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে হামলা পরিকল্পনাকারী ও পরিচালনাকারী এম তানভীর রহমানকে এই তথাকথিত কমিটিতে আহ্বায়ক সদস্য করে জুলাই বিপ্লবের আহত ও নিহত ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্তের সঙ্গে চরমভাবে বেইমানি করা হয়েছে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৯-১০ সেশন, পঞ্চম ব্যাচ থেকে সদস্যসচিব করা সত্ত্বেও একই ব্যাচের সাবেক কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মিল্লাত পাটোয়ারী এবং ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাইফুল ইসলাম সবুজকে কোনো কারণ ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবে এই কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় ২০১০-১১ সেশনের নাহিদ চৌধুরী সদা সাবেক কমিটির সহসভাপতি হওয়া সত্ত্বেও তাকে কমিটিতে জুনিয়রদের নিচে রাখা হয়েছে। যা খুবই লজ্জাজনক।
৫. বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২-১৩ সেশনের ৭ম ব্যাচের সাইফুল ইসলাম নিবিড় গত কমিটিতে ব্যাচের মধ্যে ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এসব অসংগতির বিরুদ্ধে আমরা বিগত পাঁচ দিন যাবৎ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। এর সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে চাই আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণভাবেই প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তবে আমাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে অশান্তির দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য একটা গ্রুপ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, তারা বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশে আনাগোনা করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
যদি ক্যাম্পাসে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে বর্তমান এই অযোগ্য কমিটিকে এর দায়ভার নিতে হবে। সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই তথাকথিত কমিটি দ্রুত বিলুপ্ত করে আন্দোলনে ভূমিকা রাখা নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাতিন, সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন, সাবেক সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আব্দুস শুকুর আইমান, সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, সাবেক সহপ্রচার সম্পাদক মেহেদী হাসান, সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল আলম, মিনহাজুল আলমসহ পদ না পাওয়া শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।