সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
ট্রাক্টরে করে মাটি নিয়ে যাওয়া হয় ইটভাটায়। ওই মাটি ট্রাক থেকে পড়েছে পাকা সড়কে। গত তিন দিন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির কারণে সড়কের মাটি এখন কাদায় পরিণত হয়েছে। ফলে যানবাহনের চালক ও যাত্রী এবং হেঁটে যাতায়াতকারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। কাদায় পিছলে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন।
কিশোরগঞ্জ-ছয়না ডিসিসি সড়কের করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের সাদকখালী মোড় থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের মরিচখালী বাজার পর্যন্ত এবং আব্দুল হামিদ সড়কের নিকলী থেকে করিমগঞ্জের খয়রত মোড় পর্যন্ত দুই সড়কের ১৫ কিলোমিটারে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, খয়রতের মোড় থেকে পূর্ব দিকে এক কিলোমিটার এবং পশ্চিম দিকে ডিসিসি রোডে মদন গুণধরসহ জয়কা ইউনিয়ন পার হয়ে সাদকখালী পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়ক কাদাপানিতে একাকার। এদিকে খয়রত মোড় থেকে নিকলী উপজেলা সদর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সড়কেরও একই অবস্থা। কাদার কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বিশেষত দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন মোটরসাইকেলচালকেরা। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা সড়কে বের হলেও হাত-পা ছিলে ঘরে ফিরতে হচ্ছে।
এদিকে কাদার কারণে সড়কের পাশের লোকজন ও ব্যবসায়ীদেরও পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। খয়রতের মোড় এলাকার কয়েকজন দোকানদারকে কোদাল দিয়ে সড়কের কাদা সরাতে দেখা গেছে।
লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকার বড় হাওরের ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কৃষকেরা অবৈধভাবে বিক্রি করে দিচ্ছেন ইটভাটায়। কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার অন্তত ৪০টি ইটভাটায় এসব মাটি যাচ্ছে। ভাটায় মাটি নেওয়ার জন্য এ দুই সড়ক দিয়ে দিনরাত চলাচল করে ট্রাক ও ট্রলি। পরিবহনের সময় খোলা ট্রাক ও ট্রলি থেকে মাটি পড়ে সড়কে। টানা তিন দিন কয়েক দফা গুঁড়িগুঁড়ি ও হালকা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সড়কে কাদাপানির সৃষ্টি হয়েছে। পিচ্ছিল হয়ে গেছে সড়ক। আজ রোববার সকালেও কয়েক দফা হালকা বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ফলে গত তিন দিনে দুটি সড়কে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।
খয়রত মোড় এলাকার বাসিন্দা আবু সজীব (৩৫) বলেন, ‘ভাটার ট্রাকের জন্য বিপদে আছি। এত দিন ধুলার মধ্যে ছিলাম। এখন কাদার মধ্যে আছাড় খেতে হচ্ছে। মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলাম, কাদায় পড়ে গিয়ে হাত-পা ছিলে ঘরে ফিরেছি।’
মোড়ের মিষ্টি ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন (৩১) বলেন, ‘এখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা মাটি বহনকারী ট্রাক যাওয়া-আসা করে। ট্রাকের ধুলোবালু ও কাদা দোকানের ভেতরে আইসা পড়ে। আমরা বড় বিপদের মধ্যে আছি। এসব থেকে কবে মুক্তি পাব?’
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে এ দুটি সড়ক হয়ে প্রতিদিন মোটরসাইকেলে বাড়িতে যাওয়া-আসা করেন নিকলীর কারপাশা ইউপি চেয়ারম্যান তাকি আমান খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রশাসনকে জানালেও বিষয়টি তারা দেখছে না।’
গুণধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু ছায়েম রাসেল ভূঁইয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় ট্রাক দিয়ে মাটি নেওয়া হচ্ছে। ট্রাক যাওয়ার সময় মাটি সড়কে পড়ছে। করিমগঞ্জের ইউএনওকে আমি একাধিকবার বিষয়টি জানিয়েছি। এখন কার কাছে গেলে যে এর সমাধান পাব, জানি না।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি ওই সড়কে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।