আয়নাল হোসেন, ঢাকা
রাজধানীতে পশুপাখির মার্কেট হিসেবে কাঁটাবন মার্কেট সুপরিচিত। পশুপাখিপ্রেমী অনেকেই এ মার্কেটে আসেন শখের পশুপাখি কিনতে। কেউবা আসেন পোষা প্রাণীর খাবার কিনতে। তবে এ মার্কেটের সামনের ফুটপাত ধরে হাঁটার উপায় নেই। ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান। শুধু তা-ই নয়, মার্কেটের সামনের সড়কদ্বীপের গাছগুলোও উধাও হয়ে যাচ্ছে। পশুপাখির উচ্ছিষ্ট খাবার, ময়লা-আবর্জনা দূষিত করছে পরিবেশ।
কাঁটাবন পশুপাখির মার্কেটে গত বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, কাঁটাবন মসজিদ থেকে শুরু করে প্রায় নীলক্ষেত পর্যন্ত ফুটপাতে দোকানিদের মালপত্র রাখা। সেখান দিয়ে হাঁটা দায়। পশুপাখির বর্জ্য থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সড়কদ্বীপের গাছও কমে গেছে।
এ বিষয়ে ওই এলাকার একাধিক দোকান কর্মচারী ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের দাবি, গাছ যে কারা কাটছে, তা তাঁরা জানেন না। তবে স্থানীয় সূত্র বলেছে, পশুপাখি ও তাদের খাবার বিক্রির জন্য আলোকিত পরিবেশ দরকার। এর সঙ্গে গাছগুলো উধাও হওয়ার কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে।
কাঁটাবন মার্কেটের গাছ উধাও ও ফুটপাত দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাকুয়া অ্যান্ড পেটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা গাছের যত্ন নেন। কিছু মানুষরূপী অমানুষ গাছগুলো নষ্ট করছে। আর ফুটপাতে মালপত্র না রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নিষেধ করা হয়েছে।
কাঁটাবন মার্কেটের সামনের সড়কদ্বীপের গাছ উধাও হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ ও নগরবিদ ড. ইকবাল হাবীব আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাজধানীতে নব্বই দশকের আগে হর্টিকালচার নামের একটি বিভাগ গাছপালা সংরক্ষণ এবং পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল। সিটি করপোরেশন আসার পর তারা নিয়মিত কাজ করছে না। তারা উন্নয়নের নামে নানা স্থাপনা তৈরি করে পরিবেশ ধ্বংস করছে। কাঁটাবনে যেসব পশুপাখি বিক্রি করা হয়, সেগুলো কোথা থেকে আনা হচ্ছে, তার নিয়ন্ত্রণ দরকার। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
পুরান ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের সদস্যসচিব জাভেদ জাহান বলেন, কোনটি বন্য প্রাণী সেগুলোর সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে আগে। এ বিষয়ে যে আইন রয়েছে, তা সঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে। পরিবেশ বিপন্নের জন্য একমাত্র মানুষই দায়ী। শহরের নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাত মুক্ত রাখতে হবে। কিন্তু ফুটপাত থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায় করায় সেগুলো দখলে থাকছে। কাঁটাবন এলাকার গাছগুলো কেন মারা যাচ্ছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।
খাবারের দাম বেশি রাখার অভিযোগ
মার্কেটে দেখা যায়, অনেক দোকানে পশুপাখির খাবার বিক্রি হচ্ছে। এসব খাবার প্যাকেটজাত ও বিদেশ থেকে আমদানি করা। কিন্তু দাম রাখা হচ্ছে বিক্রেতাদের ইচ্ছেমতো। আরিফ হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, আমদানিকারকেরা যে দাম বেঁধে দেন, সে দামেই তাঁরা বিক্রি করছেন।
পোষা প্রাণীর খাবার কিনতে আসা রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা আলী হোসেন লিপটন বললেন, তিন-চার মাস আগে বিড়ালের যে খাবার ৬৫ টাকায় কেনা হতো, সে খাবার এখন ৮০-১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে পশুপাখির খাবার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বার্ডস প্যালেসের স্বত্বাধিকারী বাবুল হাওলাদার বলেন, প্যাকেটে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকলেও দাম লেখা নেই। আর দাম লিখেও লাভ নেই। কারণ তাঁরা আমদানি করার পর ১০-১৫ শতাংশ লাভ যোগ করে বিক্রি করেন। তবে সুপারশপগুলো অনেক বাড়তি দামে তা বিক্রি করছে।