নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সন্তান যদি মাদকাসক্ত হয় তাহলে সে পরিবারের যে কি দুর্দশা হয় বহুবার সেটি দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে আমার। এই সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানীয় অনেক ব্যক্তির নীরব ও গোপন কান্না দেখতে হয়েছে। এই গোপন কান্না এত কষ্টের যে, সেটি তিনি কারও কাছে প্রকাশ করতে পারছিলেন না কিন্তু আমাদের কাছে এসে গোপনে সহযোগিতা চেয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিক এলাকায় পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠিত মাদক নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্রের (ওয়েসিস) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে এমন অভিজ্ঞতার কথা বলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজির আহমেদ।
বেনজির আহমেদ বলেন, অনেকেই গোপন রেখে তাঁর স্ত্রী, সন্তানকে মাদকাসক্ত থেকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসা করাতে চান। আবার যাকে চিকিৎসা করাবেন সে চিকিৎসা নিতে চাই না। এ জন্য যিনি মাদক গ্রহণ করেন তাঁর চিকিৎসার জন্য ধরে নিয়ে যেতে হয়।
আইজিপি বলেন, যারা এনজিও সেক্টরে কাজ করেন তাঁরা বলেন মাদকাসক্ত ৮০ লাখ, বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে জনস্বাস্থ্য একটি জরিপ করেছিল তাঁরা বলেছে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৩৬ লাখ। কিন্তু বাংলাদেশে মাদকাসক্তের চিকিৎসা ব্যবস্থা বেসরকারি হাসপাতালে আছে ৫ থেকে ৬ হাজার সিট, আর সরকারি আছে ১ হাজারা ১শ সিট। সব মিলিয়ে মাত্র সাত হাজার সিট রয়েছে। কতশত বছরে ৩৬ লাখ বা ৮০ লাখের চিকিৎসা করব? আর কত সহস্র বছরে এক কোটি মাদকাসক্তের চিকিৎসা করব?
বেনজির আহমেদ বলেন, এত মানুষের যদি মাদকের চাহিদা থাকে তাহলে মাদক আসবেই। মাদকের চাহিদা বন্ধ করতে হলে যারা মাদকাসক্ত হয়েছেন তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জের পাশাপাশি কালিগঙ্গা নদীর পাশে নয়নাভিরাম পরিবেশে আমরা আন্তর্জাতিকমানের একটি বিশাল হাসপাতাল করার চেষ্টা করছি। এ জন্য ২০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। চেষ্টা আছে ১০০ বিঘা কেনার। এই হাসপাতালকে এশিয়ার হাব হিসেবে তৈরি করতে চাই। এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাই যেখানে গেলে মানুষের মন এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পুলিশ ট্রাস্টের মাদক নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র (ওয়েসিস) একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, যারা সমাজের প্রতিষ্ঠিত আছেন তাঁদের কেউ আমাদের এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে শামিল হতে পারবেন। এটা কোনো ব্যবসায়ের জন্য নয়। এটি দেশ ও জনগণের সেবার জন্য। আগামীর প্রজন্মের জন্য।