গত কয়েক দিনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে দেশব্যাপী তুমুল সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা অব্যাহত থাকার প্রভাব পড়েছিল গোটা গণপরিবহন ব্যবস্থায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ার জনমনে এখনো আতঙ্কের প্রচ্ছন্ন ছাপ রয়ে গেছে। তবে অচলাবস্থা কাটিয়ে রাজধানীসহ দেশের নানা জেলা-উপজেলার সড়কে গণপরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন গত রোববার (৪ আগস্ট) বন্ধ হয়ে যায় সারা দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচল। তবে মঙ্গলবার রাতে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে সব ধরনের সরকারি অফিস-আদালত খুলে দেওয়ার কথা বলা হলেও ট্রেন চলাচল নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহাদাৎ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদেরকে এখনো ট্রেন চলাচলের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’
এর আগে তিন দিন স্বল্প দূরত্বে কারফিউ শিথিল থাকা অবস্থায় ট্রেন চলাচল করেছিল। যদিও ট্রেন চলাচলের বিষয়ে রেলয়ের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তারাও কিছু জানাতে পারেনি। শেখ হাসিনার সরকার না থাকায় মন্ত্রণালয়য়ের কেউ রেল ভবনে যাননি। রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী অফিসে গেলেও তারা দুপুরের মধ্যে অফিস ত্যাগ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সবাই একটা আতঙ্কের মধ্যে আছে। ট্রেন চলাচল নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কেউ নেই। সেনাবাহিনী থেকে কোনো ঘোষণা আসলে হয়তো জানতে পারব।’
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী বলেন, ‘আমি আজ অফিসে আছি। কিন্তু রেল চলাচলের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেব বুঝতে পারছি না। মন্ত্রী যেহেতু নেই, তাহলে কে সিদ্ধান্ত দেবে? আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে যিনি দায়িত্ব নেবেন এ মন্ত্রণালয়ের, তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক আমরা রেল চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
এ দিকে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে সড়ক ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন গণপরিবহন মালিকেরা। আজ বুধবার রাজধানীর দুটি আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে স্বল্প বা দীর্ঘ দূরত্বের পথে যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে।
এ দিকে রাজধানীর তিনটি টার্মিনাল সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী থেকে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল শুরু করেছে। পরিবহন শ্রমিকেরা বলছেন, গতকাল থেকে যাত্রী কিছুটা বেশি।
বুধবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল অভিমুখী সব বাসের কাউন্টার খোলা হয়েছে।
হানিফ পরিবহনের একটি কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার কাউন্টার বন্ধ থাকলেও যাত্রীর সাড়া পাওয়ায় তারা গতকাল কাউন্টার খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘কাউন্টার বন্ধ থাকলেও অনলাইনে আর মোবাইলে অনেক যাত্রী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।’
সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনালের বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বুধবার দুপুর থেকে সায়েদাবাদ থেকে সব রুটে বাস চলাচল শুরু করেছে। বেশ যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে। সকালে ধারণক্ষমতার মাত্র ২০-৩০ পারসেন্ট যাত্রী নিয়ে বাস ছাড়লেও, দুপুর হতেই তা ৭০ শতাংশের মতো পাওয়া যাচ্ছে।’
মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, রংপুর, রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের নানা জেলার যাত্রী এসেছেন। ছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগের যাত্রীরাও। ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহন, সৌখিন পরিবহন, আলম এশিয়া পরিবহন, জামালপুরের রাজিব পরিবহনের বাসগুলোতে ধারণক্ষমতার ৭০ শতাংশ যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান কাউন্টার ব্যবস্থাপকেরা।
মহাখালী বাস টার্মিনালের এক শ্রমিক নেতা বলেন, ‘মহাখালী থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় কিছু গাড়ি চলাচল করেছে।’
এই শ্রমিক নেতা আরও বলেন, ‘টার্মিনালে মানুষ কম, পরিবহন শ্রমিকও খুব বেশি নাই। নেত্রকোনা, জামালপুর এসব জেলায় গাড়ি যাচ্ছে। তবে উত্তরবঙ্গের দিকে গাড়ি কম চলাচল করছে।’
মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালের বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে যখন বাস চলাচল শুরু হয়, তখন চালক ও সহকারীর অভাবে আমরা সব বাস ছাড়তে পারিনি। তাদের সাথে পরে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাদের নানাভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছে। পরে তারা ধীরে ধীরে ঢাকায় ফিরে আসতে শুরু করেছেন।’