হোম > সারা দেশ > খুলনা

ভোটের আগের রাতে আপ্যায়ন: প্রতিমন্ত্রী ও এমপির দুই প্রার্থীই বিজয়ী

যশোর প্রতিনিধি

যশোরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ ওঠা প্রতিমন্ত্রী ও এমপির সেই দুই সদস্য প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একাধিকবার দুই উপজেলার ওই দুই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলেও সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই আজ সোমবার ভোটগ্রহণ হয়েছে এবং দুই প্রার্থী বিজয়ীও হয়েছেন। 

দুই প্রার্থী হলেন—মনিরামপুর উপজেলার সদস্য প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তী ও বাঘারপাড়ার সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা। গৌতম চক্রবর্তীর পক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাঁর মামা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি। আর সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে প্রচারণা চালান বাঘারপাড়া-অভয়নগর আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়। 

বাঘারপাড়া ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী রাকিব হাসান শাওন ও মনিরামপুর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী শহিদুল ইসলাম তাঁদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার রাতে ভোটারদের হোটেলে নিয়ে বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছিলেন যশোর–৪ আসনের সংসদ সদস্য (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) রণজিৎ কুমার রায়। তিনি সন্ধ্যায় বাঘারপাড়ার অর্ধশত ভোটারকে শহরের অভিজাত ওরিয়ন হোটেলে নিয়ে আপ্যায়ন ও রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করেন। আজ সকালে তাঁরা হোটেল থেকে বাঘারপাড়ায় গিয়ে ভোট দিয়েছেন। রাতেই বাঘারপাড়ার ভোট স্থগিতের আবেদন করেন সদস্য প্রার্থী রাকিব হাসান শাওন। তিনি নির্বাচনে তালা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। 

গতকাল রাতে গণমাধ্যমকর্মীরা হোটেলটিতে গেলে ৮ তলার ৭ নম্বর কক্ষে সংসদ সদস্য রণজিৎ রায় সমর্থিত সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে বৈঠক চলতে দেখা যায়। হোটেলের নিচে এমপি ও পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চুর গাড়ি পার্ক করা দেখা গেছে। এমপি রণজিৎ কুমার রায় দাওয়াত দিয়ে এনেছেন—সে কথা স্বীকারও করেছেন একাধিক ভোটার। 

ওই সময় বাঘারপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর তাসলিমা খাতুন জানিয়েছিলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে বাঘারপাড়ার মোট ভোটার ১৩৩ জন। এর মধ্যে ৫০ জনের বেশি সদস্য হোটেল ওরিয়নে এসেছেন। এমপি রণজিৎ কুমার রায় তাঁর সদস্য প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন। 

সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা বিজয়ী ঘোষিত হলে আজ বিকেলে যশোর সার্কিট হাউসে এমপি রণজিৎ রায়কে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আপ্যায়িত হওয়া ভোটারেরা। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সার্কিট হাউসের সভাকক্ষে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সমালোচনা করছেন ওই ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকেরা। 

পরাজিত সদস্য প্রার্থী রাকিব হাসান শাওন বলেছেন, ‘হোটেল ওরিয়ন থেকে ভোটার জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য তোরাব মোল্লা তাঁকে ফোনে বলেছেন, এমপি রণজিৎ কুমার রায় তাঁদের যশোরের হোটেলে এনে রেখেছেন। তাঁদের সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে কাজ করতে বলছেন। ভোট বাতিলের দাবিতে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি ভোট বর্জন করেছেন।’ 

গতকাল রাতে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি রণজিৎ কুমার রায় বলেন, ‘আমি কাউকে ডেকে আনিনি। কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘনও করেনি। ভোটারেরা কী জন্য হোটেলে এসেছেন তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।’ 

অপরদিকে, গত ৮ অক্টোবর মনিরামপুর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তীর পক্ষে যশোর সার্কিট হাউসে ইউপি চেয়ারম্যানদের ডেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাঁর আপন মামা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।’ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মিলন ওই দিনই জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য গৌতম চক্রবর্তীর হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে ভোটারদের নগদ টাকা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ শহিদুল ইসলামের। 

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আরেক প্রার্থীর এসব অভিযোগ করেছেন। ভাগনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। জনপ্রিয়তার কারণেই সে বিজয়ী হয়েছে।’ 

এ ছাড়া ঝিকরগাছা উপজেলা আসন থেকে সদস্য পদে তালা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ইমামুল হাবিব জগলুও উপজেলার চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী টিউবওয়েল প্রতীকের রফিকুল ইসলাম বাপ্পীর হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ভোট নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভোটারদের শাড়ি, লুঙ্গি ও নগদ টাকা বিতরণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইমামুল হাবিব। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যার পক্ষে লড়েছিলেন সেই রফিকুল ইসলাম বাপ্পীও বিজয়ী হয়েছেন। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের যে সমস্ত অভিযোগগুলো রয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখেছি। সবগুলো পরীক্ষা করেছি। তথ্যভিত্তিক ভাবে প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’ 

প্রসঙ্গত, আজ যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানের একটি, ৮টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং তিনটি সংরক্ষিত (মহিলা) ওয়ার্ডসহ মোট ১২টি পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যান পদে দুইজনসহ মোট ৫১ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। জেলার ৮টি কেন্দ্রে ১৬টি ভোট কক্ষে এক হাজার ৩১৮ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। 

সুন্দরবন থেকে ২৫ কেজি হরিণের মাংস জব্দ

মাগুরায় শ্রমিকনেতার মরদেহ উদ্ধার

ফকিরহাটে ৫ তুলার গুদামে আগুন লেগে ২ কোটি টাকার ক্ষতি

মধুমেলার আগেই বাড়ছে ভিড়

বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক, আতঙ্ক

যশোরে ২৪ মামলার আসামি সন্ত্রাসী রাকিব গুলিবিদ্ধ, আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় রেফার্ড

১০ দিনের মাথায় ওএসডি যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান

ছাত্রলীগ নেতা লেখকের ভেবে জামায়াত নেতার মাছ লুট

দৌলতপুরে বিএনপি নেতার বাড়িতে অভিযান, নগদ অর্থ ও ইয়াবা উদ্ধার

দৌলতপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৩

সেকশন