খনন করায় প্রাণ ফিরেছে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের মরা পশুরসহ সাত খালের। নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায় খালগুলো যেন এখন ভরা যৌবনে। এসব খালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও ফসল আবাদ সহজ হয়েছে। খালগুলো খনন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এলজিইডির বাগেরহাট কার্যালয় থেকে জানা গেছে, অনেক দিন ধরে মরাপশুর খালসহ বেতাগা ইউনিয়নের সাতটি খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষিজমিতে সেচসহ বাসাবাড়িতে ব্যবহারের পানির সংকট ছিল। এ ছাড়া প্রতিবছর জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়তেন হাজারো মানুষ। ভোগান্তি কমাতে ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ২০২২ সালে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খালগুলো খননের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয়ে মরা পশুর, খুমারখালী, ফ্যাইস্যাখালী, দাত্নেমারী, বাসাবাড়ি, গজার ও চাকুলির খাল নামের ৭টি খালের প্রায় ২০ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
স্থানীয় অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কুমারখালী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের মাধ্যমে এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে খালগুলো খনন শুরু হয়। ইতিমধ্যে খননের প্রায় ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ খুব দ্রুত শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। নিয়মিত খনন কাজ দেখভাল করছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে খাল সংলগ্ন ৯টি গ্রামের হাজারো মানুষ খননের সুবিধা ভোগ করতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া খালের আশপাশের প্রকৃতিতেও প্রাণ ফিরেছে। খাল খনন শেষ হলে এলাকার অন্তত এক হাজার হেক্টর জমিতে চাষিরা সহজে সেচ দিতে পারবেন বলে জানায় এলজিইডি।
বেতাগা গ্রামের ইনসান শেখ নামের এক কৃষক বলেন, ‘পানি হচ্ছে চাষাবাদের প্রাণ। কিন্তু নদী-খাল যদি মৃত থাকে তাহলে সেচের সমস্যা দেখা দেয়। খালগুলো খননে আমাদের যে কী উপকার হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না।’
১০-১২ বছর ধরে মরা পশুর খালে বেশির ভাগ সময় পানি থাকে না বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা কুদ্দুস শেখ। তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল আমরা মরা পশুরে গোসল করতাম, মাছ ধরতাম। এখন খননের পরে নতুন পানি এসেছে। অনেক ভালো লাগছে, আবার গোসল করতে পারব, মাছ ধরতে পারব। তবে খালগুলো যাতে দখল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
কুমারখালী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা বলেন, ‘সমিতির তত্ত্বাবধানেই সদস্যরা মিলে খালগুলো খনন করা হয়েছে। কোথাও নিজেরা হাতে মাটি কেটে, আবার কোথাও স্ক্যাভেটর ব্যবহার করা হয়েছে। যেখান থেকে যেভাবে খনন করা প্রয়োজন, এলাকার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এলজিইডির কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মতো খনন করেছি।’
সব ধরনের নিয়ম মেনে ও এলাকার মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে খালগুলো খনন করা হয়েছে বলে জানান এলজিইডি বাগেরহাটের সহকারী প্রকৌশলী মিনহাজুল ইসলাম মেহেদী।
এলজিইডি বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান জানান, জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি ও জমিতে সেচ সুবিধার জন্য সাতটি খাল খনন কাজ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০টি খালের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ খুব দ্রুত শেষ হবে।