আবুল কালাম আজাদ, চারঘাট
‘সুখবর, সুখবর, সুখবর। চারঘাটবাসীর জন্য সুখবর। মাথাব্যথা, কোমর ব্যথা, কাশি, হার্ট ও যৌন বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার সাহেব প্রতি মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার নিয়মিত রোগী দেখবেন....।’ ‘মেলা মেলা মেলা। সিমের ধামাকা মেলা’। ‘আগামীকাল চারঘাট বাজারে একটি বিরাট গরু জবাই করা হবে। গরুটির প্রতি কেজি মাংস.....। ’ এ রকম নানা সুখবরের মাইকিং রাজশাহীর চারঘাটবাসীর জন্য নিত্য দিনের যন্ত্রণা।
দীর্ঘ সময় ধরে এভাবে মাইকিং করতে এখন আর দরকার পড়ে না ঘোষকের। ঘোষণাটি একবার রেকর্ড করে মোবাইলের মেমোরি কার্ডে নিয়ে ভ্যান অথবা ইজিবাইকে মাইক বেঁধে চলতে থাকে দিনভর বিরতিহীন ঘোষণা। কখনো একটি মাইক বেঁধে আবার কখনো দু’টি মাইক বেঁধে উচ্চ শব্দে দিনে-রাতে চলে এ ধরনের প্রচারণা। এতে বাড়ছে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা। এ জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পৌরসভার মিয়াপুর গ্রামের সুফিয়া বেগম বলেন, সকাল থেকেই শুরু হয় মাইকের যন্ত্রণা। ডাক্তার, গরু জবাই, ছাগলের হাট, সিম বিক্রি থেকে শুরু করে আলু পটল বিক্রেতা পর্যন্ত বাড়ির সামনে এসে উচ্চ শব্দে মাইক বাজাতে থাকে।
উপজেলার রাওথা গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, আগে প্রধান প্রধান সড়কে মাইকে এসব কার্যক্রম হলেও বর্তমানে গ্রামে পাড়া মহল্লায় হচ্ছে এসব। সকাল–দুপুর মাইকের এই উচ্চ শব্দে ভোগান্তির কথা বিবেচনা করছে না তারা।
রাজশাহী জজ কোর্টের আইনজীবী খাইরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন মতে অনুমোদিত ব্যক্তি বা সংস্থা ছাড়া শব্দযন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। গ্রামাঞ্চল বা নীরব এলাকায় দিনের বেলা ৫০ ও রাতের বেলা ৪০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ ব্যবহারের অনুমোদন নেই। ভবিষ্যতের স্বার্থে গ্রাম–গঞ্জের শব্দ যন্ত্রের পরিমাণ নির্ধারণ প্রয়োজন।
মাইকযোগে গরু জবাইয়ের জানান দেওয়া হেফাজ কসাই বলেন, মাইকে উচ্চ শব্দে না ডাকলে লোকজনের কানে যায় না। এ জন্য মাইকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ডাকা হয়। এতে যে আইনে নিষিদ্ধ এমনটি জানা নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, উচ্চ শব্দ অদৃশ্য শত্রু। সবাই আক্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু কেউ দেখছে না। এ দূষণে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দ দূষণের ফলে বধিরতা, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদ্যন্ত্রের জটিলতা, ঘুমের ব্যাঘাত, মনঃসংযোগ নষ্ট হওয়াসহ অনেক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
উচ্চ শব্দ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলার উপপরিচালক মাহমুদা পারভীন বলেন, শব্দযন্ত্রের ব্যবহার রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। যারা এসব শব্দযন্ত্র ব্যবহার করছে তারা না বুঝেই করছে। স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না।