ফজলে করিমের বয়স ৮৪ বছর। জন্মের পর বাবার ভিটাবাড়ি দেখলেও পরে জেনেছেন এগুলো সব সরকারের খাসজমি বা অন্য কারও। কালের বিবর্তনে সেগুলো আর কখনো নিজের করতে পারেননি। তবে ৮৪ বছর পরে এসে নিজের নামে এখন তাঁর দুই শতাংশ জমিতে বাড়ি আছে।
আর এটা সম্ভব হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য। জেলার চার উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর হবে মোট ১ হাজার ২৮২টি। এর মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায় ৮৭৫টি, পাটগ্রাম ৯৯, হাতীবান্ধা ১৬৬ ও আদিতমারীতে ১৪২টি।
ফজলে করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিজের নামে একটা ঘর আছে, জায়গা আছে—এর চেয়ে শান্তির কী আছে! এই বয়সেও তিনি কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, ১৫ বছর আগে স্বামী মারা গেলে খুব কষ্টে দিন পার করেছেন। দুই ছেলে তাঁর কাছে থাকে না। শেষ বয়সে এসে নিজের নামে একটা বাড়ি পেয়ে এখন ভাবনাহীন জীবন তাঁর।
তবে অনেকেই আবার ভিন্ন ভিন্ন এলাকা থেকে আশ্রয় নিয়েছেন এই প্রকল্পে। তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে মজিদা বেগমের আগের ভিটাবাড়ি। এবার রোজার ঈদের সময় এখানে দুই শতাংশ জায়গার ওপর বাড়ি পেয়েছেন।
এর আগে একটা সময় অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে থেকেছেন মজিদা বেগম। তিনি বলেন, আগে যেখানে ছিলেন সেই চর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন–গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ জুন আশ্রয়ণ–২ প্রকল্পের অধীনে পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমিহীন–গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠান গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল উদ্বোধন করবেন।
জানা যায়, এ পর্যন্ত ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন–গৃহহীন মানুষ পুনর্বাসিত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়েছেন ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জন মানুষ।
এ পর্যায়ে ভূমিহীন–গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার সব উপজেলাসহ মোট ৭০টি উপজেলা। এ হিসাবে আগে ঘোষিত জেলা–উপজেলাসহ মোট ৫৮টি জেলা ও ৪৬৪টি উপজেলা ভূমিহীন–গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে।
কালীগঞ্জ থানার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শুধু ঘর উপহার দিয়েই সীমাবদ্ধ থাকা হয়নি, বরং তাঁদের জীবন–জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রশিক্ষণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের দুই শতাংশ জমি দলিলের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে তাঁর মধ্যে সবজি চাষের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।