সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
কসাইপাড়ায় বসতি, বাবাও ছিলেন কসাই। ৮-১০ বছর আগে দুই ভাই বাদশা রাজু (৩৩) ও জুয়েল (২৯) তাই চাপাতি হাতে মাংস বিক্রি করতেন এলাকায়। চাপাতির বদলে হাতে পিস্তল তুলে নিয়ে দুই ভাইয়ের নাম এখন হামকা রাজু ও ধামা জুয়েল। তাঁরা এখন এলাকার ত্রাস, পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী।
ধামা জুয়েলকে ১৪ ডিসেম্বর বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানা-পুলিশ। এর আগে গত বছরের ৫ নভেম্বর চান্দগাঁও থেকেই অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তাঁর বড় ভাই হামকা রাজু। বছরখানেক কারাভোগের পর কিছুদিন আগে তিনি জামিনে বেরিয়েছেন। এর আগে ২০১২ সালেও ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে কারাগারে যান রাজু। মূলত তখন থেকেই এই দুই ভাইয়ের অপরাধের সাম্রাজ্য বিস্তৃতি পায়। চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং পরিচালনা, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হামকা রাজু ও ধামা জুয়েলের বিরুদ্ধে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঈনুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, হামকা রাজু ও ধামা জুয়েল দুই ভাই চান্দগাঁও থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। রাজুর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে চান্দগাঁও ও বোয়ালখালী থানায় ৯টি মামলা রয়েছে। আর জুয়েলের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ থানায় ৬টি মামলা রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী এই দুই ভাই একাধিকবার জেলে গেছেন। জেল থেকে বেরিয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়েছেন। তাঁরা গড়ে তুলেছেন ভয়ংকর ‘হামকা গ্রুপ’। গ্রুপটি ছিনতাই থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা থেকে খুন-অপহরণসহ সমস্ত অপরাধে জড়াচ্ছে। কথায় কথায় কুপিয়ে জখম, অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন কিংবা গুলি চালিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অন্তত ৭-৮টি মাদকের স্পট চালায় গ্রুপটি। তাদের চাঁদা না দিয়ে বহদ্দারহাটের আশপাশ এলাকায় ব্যবসা করা দুষ্কর। সড়ক ফুটপাতে দোকান ও বিভিন্ন পরিবহন স্ট্যান্ড বসিয়ে চাঁদা আদায় করে গ্রুপটি। সন্ধ্যা নামতেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে এই গ্রুপের ছিনতাইকারীরা।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হামকা গ্রুপ তৈরি হয়েছিল এক দশক আগে আরেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর হাত ধরে। ওই সময় হামকা গ্রুপ ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘুম হারাম করে দেওয়ার মতো। এটার আদলে নগরীর বিভিন্ন এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা নিজেরাই হামকা গ্রুপ নাম দিয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
জুয়েলকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলন করে নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান বলেন, ধামা জুয়েল একজন দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং লিডার। দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধামা জুয়েল এলাকার জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে আসছে।