হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করার পরও চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন বাজারে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ। তদারকি না থাকায় কাগজে-কলমে পলিথিনমুক্ত করার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে দেখা গেছে এর উল্টো চিত্র।
নগরের কাজির দেউড়ী, চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেটসহ একাধিক বাজারে গিয়ে দেখা যায়, যেকোনো পণ্য কিনলেই ব্যবসায়ীরা পলিথিন ব্যাগে পণ্য সরবরাহ করছেন।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁরা বলছেন, সিটি করপোরেশন অভিযান বন্ধ করে দেওয়ায় বাজারগুলোতে আবারও পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বাড়ছে। এর পেছনে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
পরিবেশবিদ ইদ্রিস আলী বলেন, পলিথিন তৈরির কারখানা বন্ধ না হলে বাজারে এর ব্যবহার থাকবেই। বাজারগুলোকে পলিথিনমুক্ত করতে হলে আগে পলিথিন তৈরির কারখানা বন্ধ করতে হবে। এ কাজটি হলো পরিবেশ অধিদপ্তরের, কিন্তু তারা সে কাজটি করছে না। যে কারণে বাজরে পলিথিনের ব্যবহার আবারও বাড়ছে।
নির্বাচিত হওয়ার পর গত বছরের জুনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকাকে পলিথিনমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে ছিলেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথম দফায় নগরীর তিনটি কাঁচাবাজারকে পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
পরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নগরীর সব কাঁচাবাজারকে পলিথিনমুক্ত ঘোষণা দেন মেয়র। ওই সময় পলিথিন ব্যবহার না করতে বাজারগুলোতে মাইকে প্রচার, লিফলেট বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানের পর কাঁচাবাজারগুলোতে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমে এলেও অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ার এখন আবারও পলিথিনের ব্যবহার বেড়েছে।
গত রোববার সকালে চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মাছ, মাংস, শাকসবজি—ক্রেতারা যে পণ্যই নিচ্ছেন বিক্রেতারা তা পলিথিন ব্যাগে সরবরাহ করছেন। এমনকি ১০ টাকার কাঁচা মরিচ কিনলেও সেটি পলিথিন ব্যাগে সরবরাহ করা হচ্ছে। যাঁরা বাজার
করে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই পলিথিন ব্যাগে করে বাজার নিয়ে যাচ্ছেন।
একই অবস্থা নগরীর অন্য বাজারগুলোতেও। পাহাড়তলী বাজারে গিয়েও দেখা যায়, যাঁরা বাজার করছেন, তাঁদের প্রায় সবাই পলিথিনের ব্যাগে করে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন।
পাহাড়তলী বাজারের সবজি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ক্রেতাদের অনেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে আসেন না। তখন সবজি বিক্রি করার জন্য আমাদের বাধ্য হয়েই পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ করতে হয়। ক্রেতারা বাজারের ব্যাগ নিয়ে এলে পলিথিনের ব্যবহার অনেক কমে যাবে।
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীকে পলিথিনমুক্ত করার বিষয়ে আমরা এখনো আগের অবস্থানে আছি। কিন্তু এখন ফুটপাত দখলমুক্ত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। ফুটপাত দখলমুক্ত করার পর আবারও আমরা পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করব।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পলিথিন কারখানার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করি না, এ তথ্য ঠিক না। আমরা যখনই জানতে পারি, কোথাও পলিথিনের কারখানা আছে, তখন আমরা সেখানে অভিযান চালাই।’
তবে গত এক মাসে কয়টি পলিথিন কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেছেন, জানতে চাইলে মিয়া মাহমুদুল হক নির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।