রাশেদুজ্জামান বাবু, বোদা (পঞ্চগড়)
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়নের শালবাগানটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসতেন। শালবাগান ঘিরেই এই ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়। কিছু কুচক্রী মহল নিজেদের দাবি করে বনের বড় বড় গাছ কেটে নেওয়ায় বনটি প্রায় উজাড় হয়ে গেছে। সব মিলে শালবাগানটি আজ অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার রফিকুল, আশরাফুল, মানিক, মুক্তা, দুলাল, রমজান, বল্টু, ফজলু, নবীউল, হক্কুল, আসাদুল্লাহ, মাগু, নবীর আলী, ফাগু, নেন্দ, খলিল চৌকিদার, খামির, হাসির, আছিরউদ্দীন, পারভেজ, দারাজ, নুর ইসলাম, আবু হোসেন ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান ওরফে জোহা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এসব গাছ কাটছেন। বাগানের অধিকাংশ বড় গাছই তাঁরা কেটে ফেলেছেন। কোনো গাছ কাটার উপযোগী হলেই তাঁরা কেটে ফেলছেন। তাঁদের দাবি, বাবা-দাদার জমির গাছ বলে তাঁরা এ গাছ কাটছেন।
তবে বন বিভাগ বলছে, শালবনের পুরো এলাকাই সরকারের। আগে জমি যাদেরই থাকুক, শালবন হওয়ার পরে তা খাসজমি হয়ে যায় বলেও উল্লেখ করে বন বিভাগ।
এলাকাবাসী জানান, এক যুগ আগেও এখানে দেখা মিলত অতি প্রাচীন শালগাছ। কয়েক একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল কয়েক হাজার গাছ। যে গাছগুলোর নিচে মানুষ দাঁড়িয়ে প্রশান্তি পেতেন। এখন এ বাগানটি হয়েছে সংকীর্ণ। এভাবে আর কিছুদিন চললে বা প্রশাসন নজর না দিলে, বনটি ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ইউনিয়নের মফিদুল আব্দুল কাদের।
গাছ কাটা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রফিকুল, দুলাল, খলিল চৌকিদার মাগু জানান, তাঁদের বাপ–দাদার জমিতে বর্তমানে শালবাগান। তাঁদের জমিতে থাকায় কিছু গাছ তাঁরা কেটেছেন। শুধু তাঁরা কেন, বর্তমান সরকারদলীয় অনেক নেতা নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়ে বড় বড় গাছ কেটে নিয়েছে। দেখা যাবে এখানকার শালকাঠ দিয়ে অনেকে বাসাবাড়ির আসবাব বানিয়েছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে যদি সমস্যা না হয়, তাহলে তাঁদের সম্পত্তি থাকার পরেও তাঁদের ক্ষেত্রে আপত্তি কেন?
ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, বনটি রক্ষার বিষয়টি আমি একাধিকবার উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় তুলেছি। এরপরও এলাকার কিছু মানুষ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গাছ কেটে নিচ্ছেন।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী বলেন, ‘শালবাগান যেখানে হোক সেটি পরে খাস খতিয়ানে চলে যায়। সে হিসেবে এটি সরকারি সম্পত্তি। এটি রক্ষার্থে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এর বাইরেও বিষয়টি নিয়ে বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে।’
পঞ্চগড় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মধু চন্দ্র বলেন, ‘আমি কিছুদিন হলো এখানে এসেছি। বেশির ভাগ সময় দেবীগঞ্জ উপজেলায় রেঞ্জ অফিসে বসি। সে কারণে কিছুটা ব্যাঘাত হয়েছে। আমি বিষয়টি দেখব।’