বিশ্ববিখ্যাত লেখক রবিন শর্মার লেখা অন্যতম একটি বই হলো দ্য ৫ এএম ক্লাব। ‘দ্য ৫ এএম ক্লাব’ বইটিতে লেখক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের উৎপাদনশীলতা, সৃজনশীলতা, কর্মক্ষমতা, নেতৃত্বের গুণাবলি এবং সর্বোপরি ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠার গুরুত্ব কতখানি। বইয়ের শিক্ষাগুলো তুলে ধরেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।
ভোরে ঘুম থেকে উঠুন
দ্য ৫ এএম ক্লাব বইয়ের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো ভোর ৫টার সময় ঘুম থেকে ওঠা। এটা একটা সফল এবং প্রাকৃতিক অভ্যাস। যাঁরা ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠেন, তাঁরা অন্য যাঁরা দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন তাঁদের চেয়ে বেশি সময় হাতে পান। সেই অতিরিক্ত সময় জীবনের অগ্রগতির কাজে ব্যয়ের সুযোগ তৈরি হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে বইটিতে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলে জীবনে ডিসিপ্লিনের সেন্স তৈরি হয়; যা একটা মানুষকে সফলতার দিকে নিয়ে যায়।
রুটিন অনুযায়ী দিন শুরু করুন
বইটির লেখক শর্মা বলেছেন, শুধু ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠা আপনাকে সফল করে তুলবে না, বরং আপনি কীভাবে সকালের সময়টা ব্যয় করতে চান, তাও গুরুত্বপূর্ণ। তার ২০/২০/২০ সূত্র অনুসারে, আপনাকে ২০ মিনিট শারীরিক, ২০ মিনিট মানসিক আর ২০ মিনিট আত্মিক উন্নতির জন্য ব্যয় করতে হবে। শারীরিক উন্নতি করতে হলে ব্যায়াম করতে হবে। মানসিক উন্নতির মধ্যে জার্নালিং, ইবাদত, ধ্যান বা শান্ত চিন্তাভাবনা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। আর আত্মিক উন্নতির কার্যক্রমগুলোর মধ্যে আপনার জীবনের লক্ষ্যগুলো পর্যালোচনা করা, পত্রিকা বা বই পড়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
সঠিক ঘুম চক্রের ভূমিকা
বইটিতে রবিন শর্মা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই জগৎ ধীরে ধীরে নিদ্রাহীনতার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। মানুষ প্রায়ই কঠোর পরিশ্রম আর সাফল্যকে সারা রাত জেগে থাকার এবং নিজের ধৈর্যের পরীক্ষার ধারণার সঙ্গে জুড়িয়ে দিয়ে ভুল করেন। রাতে দেরিতে ঘুমান আবার সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন। ফলে শরীর, মন ঠিক থাকে না এবং কাজে ব্যাঘাত ঘটে। বইটিতে লেখক ঘুমের চক্রের যত্ন নেওয়ার এবং ভোর ৫টায় জীবন শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করেছেন।
নতুন অভ্যাস তৈরিতে হাল ছাড়বেন না
কখনো কখনো ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠা অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। আপনার কষ্ট হতে পারে। তবে হাল ছেড়ে দেওয়া আপনার উচিত হবে না। অন্য যেকোনো নতুন অভ্যাসের মতো, এই রুটিনে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে। যেকোনো নতুন অভ্যাস রাতারাতি তৈরি হয় না। বইয়ের লেখক রবিন শর্মা উল্লেখ করেছেন, মানুষের মস্তিষ্ক পরিবর্তনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। বিজ্ঞান অনুসারে একটি নতুন অভ্যাস তৈরি করতে প্রায় ৬৬ দিন লাগে। ৬৬ দিন একটানা ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠুন। দেখবেন এটি আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
বিভ্রান্তি এড়িয়ে চলুন
আমাদের জীবনে চলার পথে বা কাজ করার ক্ষেত্রে নানা রকম বিভ্রান্তি এসে বাগড়া দেয়। কিন্তু কাজে সফল হতে হলে বিভ্রান্তি এড়িয়ে চলতে হবে। বর্তমান যুগ হলো প্রযুক্তির। ডিজিটাল যুগ। এই যুগে ডিজিটাল ডিভাইস আমাদের প্রায়ই বিভ্রান্তি তৈরি করে। প্রায়ই আপনার সকালকে নিজের মতো ব্যবহার করার পথে এবং আপনাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেতে বাধা দেয়। বইটি সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্যের দ্বারা বিভ্রান্তি এড়াতে আপনার সকালের সময়কে প্রযুক্তিমুক্ত রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন
রবিন শর্মা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষান্ত থাকলেই চলবে না, বরং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক সময় মানুষ তাঁদের প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকতে বা বলকে ঘুরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এটি। তাই যত বাধাই আসুক না কেন, নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন। প্রতিশ্রুতির ওপর অটল থাকুন।
জীবনে সঠিক ভারসাম্য খুঁজে পাওয়ার ক্ষমতা
মানুষ প্রায়ই যেকোনো জিনিস বোঝার জন্য সঠিক মানসিকতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। কিন্তু বইটি কয়েক ধাপ এগিয়ে মানুষের স্বাধীন মন ও আত্মার ধারণার পরিচয় দেয়।
বইটিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে– শরীর, মন ও আত্মাকে সুন্দর ও সতেজ রাখতে জীবনের সবকিছুতে ভারসাম্য খুঁজে নিতে হবে। যখন জীবনে সবকিছুতে একটা ভারসাম্য থাকবে, তখন শরীর, মন ও আত্মা সুন্দর থাকবে। আর আমরাও সুখী থাকব। আমাদের সাফল্যের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।
পরিবর্তনের শিল্প
বইটি আত্মপ্রতিফলনে দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করেছে। কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, এর উদ্দেশ্য কী? এই রুটিনের পেছনে ধারণাটি হলো ভুলগুলো প্রতিফলিত করা, শেখা এবং পরিবর্তন হওয়া। পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই আপনার প্রতিদিন নিজের আরও ভালো উন্নতির চেষ্টা করা উচিত। ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার যে কাজগুলো করা উচিত, তার মধ্যে একটি হলো আপনার কর্ম এবং আগের দিনের বাদ পড়া সুযোগগুলোর দিকে ফিরে তাকানো। সে অনুযায়ী নতুন দিনটি অতিবাহিত করা।
নেতৃত্ব দেওয়া মানে সেবা করা
রবিন শর্মা বলেছেন, সেবার হাতিয়ার হওয়াই প্রকৃত শক্তি। চারপাশের অন্যদের জীবনকে সাহায্য ও উন্নত করার জন্য নিজের জীবনকে একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা আপনার মাঝে সত্যিকারের অনুপ্রেরণা আনতে পারে। মানুষের সেবা করার মাধ্যমে আপনি নেতা হয়ে উঠতে পারেন। আশপাশের মানুষকে সেবা করুন। তাহলে আপনার মনে প্রশান্তি থাকবে। মানুষ আপনাকে সম্মান করবে। মানুষের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠবেন।
স্বপ্নে অটল থাকুন
যাই হোক না কেন আপনার স্বপ্নে অটল থাকুন। আপনার স্বপ্ন থেকে কখনো পিছপা হবেন না। আপনি যখন বড় স্বপ্ন দেখবেন, তখন মানুষ আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে এবং আপনাকে নিয়ে হাসবে। নিজের সম্পর্কে সন্দেহ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও, আপনাকে প্রথম পয়েন্টে ফিরে যেতে হবে এবং আবার শুরু করতে হবে। জীবনে যত বাধাই আসুক না কেন, স্বপ্নের সঙ্গে কমপ্রোমাইজ করবেন না।