ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২২তম আসর হয়ে গেল গত ২০ থেকে ২৮ জানুয়ারি। অন্যবারের তুলনায় এবারের উৎসব ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। শর্মিলা ঠাকুর, মাজিদ মাজিদি, অঞ্জন দত্ত, মমতা শঙ্কর, স্বস্তিকা মুখার্জির মতো গুণীজন এসেছিলেন এবার। এ ছাড়া এবারের উল্লেখযোগ্য সংযোজন ছিল তিনটি মাস্টার ক্লাস। এত সাফল্যের মাঝেও শেষ পর্যন্ত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পুরস্কার ও জুরিবোর্ড নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এবারের উৎসবে ফিপ্রেসির বিধিমালা ভেঙে জুরি কমিটি গঠন ও উৎসব আয়োজক কমিটির এক সদস্যের পুরস্কারপ্রাপ্তি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
প্রশ্নবিদ্ধ ফিপ্রেসি পুরস্কার
চলচ্চিত্র সমালোচকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকস, যা ফিপ্রেসি নামে পরিচিত। বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে নতুন চলচ্চিত্রকারদের পুরস্কার দিয়ে থাকে সংগঠনটি। ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার জন্য বাংলাদেশ প্যানোরামা থেকে দুটি বিভাগে পুরস্কার দেয় তারা। ফিপ্রেসি পুরস্কারের প্রধান উদ্দেশ্য চলচ্চিত্রশিল্পের প্রচারের পাশাপাশি তরুণ নির্মাতাদের উৎসাহিত করা।
এবারের আসরে স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বিভাগে ফিপ্রেসি পুরস্কার জিতেছে ‘লায়লা’। এ সিনেমার নির্মাতা বৈশাখী সমাদ্দার ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজক সংস্থা রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজক কমিটিরও নির্বাহী সদস্য তিনি। আয়োজক ও উৎসব কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের এই পুরস্কারপ্রাপ্তি ফিপ্রেসির উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। হতাশ করেছে তরুণ নির্মাতাদের।
ফিপ্রেসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগের অন্যতম বিচারক ছিলেন মফিদুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা যে সিনেমাগুলো পেয়েছি, সেখান থেকে স্বাধীনভাবে বিচার করেছি। উৎসবসংশ্লিষ্ট কারও পুরস্কার অর্জনের প্রশ্ন উঠলে, সে বিষয়ে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর ভালো বলতে পারবেন।’
জুরি কমিটি নিয়ে বিতর্ক
ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি কমিটি গঠনেও ভাঙা হয়েছে ফিপ্রেসির বিধিমালা। ফিপ্রেসি পুরস্কারের বিধিমালার ১০ নম্বর ধারায় বলা আছে, ‘জুরি সদস্যদের ফিপ্রেসি পুরস্কারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রযোজনা, বিতরণ কিংবা পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্ত থাকা যাবে না। সংশ্লিষ্ট উৎসবের সঙ্গে শিল্পগতভাবে বা আর্থিকভাবে কোনো প্রকারের সম্পর্ক থাকতে পারবে না।’
এ বিষয়ে মফিদুল হক বলেন, ‘ফিপ্রেসির নিয়ম অনুযায়ী হয়তো আমি জুরি সদস্য হতে পারি না। কিন্তু হেডকোয়ার্টার থেকেই আমাদের জুরি কমিটি নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তা ছাড়া, কোনো কিছুর ব্যত্যয় ঘটলে সে বিষয়ে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর বলতে পারবেন।’
নীতিনির্ধারক ও আয়োজকদের বক্তব্য
এ বিষয়ে জানতে কথা হয় উৎসবের আয়োজক রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহমেদ মুজতবা জামালের সঙ্গে। জুরি কমিটি গড়ার দায়ভার তিনি চাপিয়েছেন ফিপ্রেসির ওপর। তাঁর ভাষ্য, ‘এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। ফিপ্রেসি প্রেসিডেন্ট এই জুরি কমিটি তৈরি করেছেন। আমরা সে অনুযায়ী দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে ফিপ্রেসির কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক ক্লাউস এডা। ফিরতি মেইলে তিনি জানিয়েছেন, ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের এই বিধিমালা ভাঙার অভিযোগ নিয়ে বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করছেন। বোর্ড সদস্য ও আইনি পরামর্শকদের সঙ্গে কথা বলে, সব দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করে, দ্রুত এ বিষয়ে অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত জানানো হবে।