সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় আন্দোলন। প্রথমদিকে এ আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও একপর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংঘাত বাঁধে। অনেক প্রাণহানি ঘটে। বিপরীতে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষের রোষানলে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনের বরাত দিয়ে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে, ‘ছাত্র আন্দোলনের সময় ৩ হাজার ২০৪ জন পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে।’
ভিডিওটি ‘আরণ্য’স টক (Aranna’s Talk)’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত রোববার (৬ অক্টোবর) পোস্ট করা হয়। চ্যানেলে ভিডিওটি শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সাড়ে ৩২ হাজার বার দেখা হয়েছে। একই নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টেও গত ৬ অক্টোবর ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। এখান থেকে ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে প্রায় দুইশ। এ ছাড়া গত বুধবার (৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ‘সাপোর্টার্স অব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামের প্রায় ৪ লাখ সদস্যের ফেসবুক গ্রুপে ‘ভুলতে পারিনা বাংলার ইতিহাস’ নামের পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, ‘ব্রেকিং নিউজ, ধীরে ধীরে সবই বেরিয়ে আসছে এবং আসবে!!!’
ভিডিওটির শুরুতেই জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ওয়েবসাইটে গত ১৬ আগস্ট ‘বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনে ৬৫০ জন নিহত, প্রাথমিক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়। এই তথ্যের বিপরীতে টাইম ম্যাগাজিনের বরাত দিয়ে ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ নিহত হয়েছে ৩ হাজার ২০৪ জন। ভিডিওটিতে টাইম ম্যাগাজিনের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, ‘কোনটি গণহত্যা? ৩ হাজার ২০০ পুলিশ হত্যা নাকি তাঁর বিপরীতে আত্মরক্ষার জন্য মারা যাওয়া সাড়ে ৬০০ ছাত্র?’
টাইম ম্যাগাজিনের কথিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম—During the student movement in Bangladesh, 3204 police officers were killed. বা ‘বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের সময় ৩ হাজার ২০৪ জন কর্মকর্তা নিহত’।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে টাইম ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে উল্লিখিত শিরোনামে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। টাইম ম্যাগাজিনে বাংলাদেশ নিয়ে সবশেষ গত ৩ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এত সংখ্যক পুলিশ নিহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ১৮ আগস্ট কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পুলিশদের সংখ্যা ও নামের বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করেছে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা। এই তালিকা অনুযায়ী, জুলাই আন্দোলনে নিহত পুলিশের সংখ্যা ৪৪। নিহতদের মধ্যে কনস্টেবল ২১ জন, এএসআই ৭ জন, এটিএসআই একজন, এসআই ১১ জন, নায়েক একজন এবং তিনজন পরিদর্শক। তাদের মধ্যে ৫ আগস্ট নিহত হয়েছেন ২৪ জন। আর ৪ আগস্ট ১৪ জন এবং বাকি সদস্যরা বিভিন্ন সময় নিহত হন।
অর্থাৎ, টাইম ম্যাগাজিনের বরাত দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৩ হাজারের অধিক পুলিশ নিহতের প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন।
এনায়েতপুর থানায় নিহত এই ১৫ জনের মধ্যে কোনো নারী পুলিশ সদস্য না থাকলেও বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, নিহতদের একজন গর্ভবতী নারী ছিলেন। যা নিয়ে ইতিমধ্যে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।