রয়টার্স, ওয়াশিংটন
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম নির্বাহী আদেশে চার বছর আগের ক্যাপিটলে হামলায় জড়িত প্রায় দেড় হাজার সমর্থককে ক্ষমা করে দিয়েছেন। গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু চুক্তি বাতিল এবং জাতিগত ও লিঙ্গ বৈচিত্র্য কর্মসূচি বন্ধের মতো একাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে পুলিশ, আইনপ্রণেতা এবং হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষুব্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হামলায় প্রায় ১৪০ জন পুলিশ কর্মকর্তা আক্রান্ত হন।
অনেকের উপর রাসায়নিক স্প্রের মারা হয়, কিছু পুলিশকে লোহার পাইপ ও অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। ওই ঘটনায় চারজন নিহত হন, যার মধ্যে একজন ট্রাম্প সমর্থককে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে।
ক্ষমার তালিকায় ওথ কিপার্স এবং প্রাউড বয়েজ নামে চরমপন্থী সংগঠনের নেতারাও আছেন, যারা দীর্ঘ কারাভোগ করছিলেন।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প ক্যাপিটল রোটুন্ডায় শপথ নেন, যেখানে চার বছর আগে তার সমর্থকেরা তাণ্ডব চালান। শপথ নেওয়ার সময় তিনি নিজেকে ঈশ্বরের মনোনীত ‘ত্রাণকর্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি নির্বাচনে হেরে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিলেন এবং প্রথম অপরাধী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।
শপথ নেওয়ার পরপরই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সীমান্তে সৈন্য মোতায়েনের সুযোগ তৈরি হয়। তিনি এমন এক কর্মসূচিও বন্ধ করেন, যার মাধ্যমে হাজার হাজার অভিবাসী বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পেতেন।
এক নির্বাহী আদেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়ার নীতি বাতিল করেন ট্রাম্প, যা দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সূচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেক্সিকোর ড্রাগ কার্টেলগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।
সরকারী ব্যয় কমাতে জন্য ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
বক্তৃতায় জো বাইডেন প্রশাসনের অভিবাসন ও পররাষ্ট্র নীতির তীব্র সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘সরকার বিদেশি সীমান্ত রক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে, কিন্তু নিজ দেশের জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।”
ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস ও মার্ক জাকারবার্গের মতো প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভাষণে মঙ্গল গ্রহে মহাকাশচারী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প এবং ‘গালফ অব মেক্সিকো’র নাম পরিবর্তন করে ‘গালফ অব আমেরিকা’ রাখার পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করেন।
ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মেরুকরণের নতুন অধ্যায় সূচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।