অনলাইন ডেস্ক
সৌদি আরবের হাইল অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ প্রাগৈতিহাসিক স্থান আবিষ্কৃত হয়েছে। সেখানে খনন করে বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মিলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ছিল নব্য প্রস্তরযুগে ব্যবহৃত একধরনের ‘গ্রাইন্ডিং টুলস’ বা কোনো কিছুকে ধারালো বা মসৃণ করার যন্ত্র। এই আবিষ্কার থেকে প্রাচীন মানুষের জীবনযাপন সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া যাবে বলে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা মনে করছেন।
গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মান ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব জিওএনথ্রোপোলজির সহায়তায় গ্রিন অ্যারাবিয়া প্রকল্পের অধীনে হাইলের জুব্বাহ মরুভূমির মধ্যে জাবাল আরফের কাছে মিলেছে নব্য প্রস্তরযুগের বিভিন্ন নিদর্শন। প্রাগৈতিহাসিক কালে মানব বসতি ছিল এমন বেশ কয়েকটি জায়গায় গবেষণা চালাচ্ছে সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্নতাত্ত্বিক বিজ্ঞানীদের দল।
এই আবিষ্কারে পাওয়া গেছে পাথর দিয়ে তৈরি স্থাপনা। হোলোসিন যুগের মধ্যভাগ থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবনযাপন কেমন ছিল, সেই ধারণাতেও যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে অনুমান করা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ ও পঞ্চম সহস্রাব্দের শুরুর দিকে এই স্থানে উৎকর্ষতা লাভ করেছিল মানব বসতি। কিন্তু সবকিছুর মধ্যেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হিসেবে ধরা হচ্ছে পাথরের তৈরি হামানদিস্তাকে, যা প্রতিদিন ব্যবহৃত হওয়ার পরও এত দীর্ঘ সময় পর টিকে আছে। আরবের যেসব গ্রামে কৃষিকাজই জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস, সেসব অঞ্চলে এখনো ব্যবহৃত হয় শক্ত জিনিসকে ধারালো কিংবা মসৃণ করার এসব প্রাচীন যন্ত্র।
কোনো শক্ত জিনিসকে ধারালো কিংবা মসৃণ করার যন্ত্রগুলো পাওয়া গেছে পাথরের তৈরি চুলার আশপাশে। ছোট ছোট পাথর ও হামানদিস্তার ভাঙা অংশ দিয়ে ঢাকা ছিল এসব। খাদ্য প্রস্তুত এবং জন্তু জানোয়ারের হাড় থেকে অস্ত্র তৈরিতে কাজে লাগত এসব সরঞ্জাম। আদিম মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং শিকার করা থেকে কৃষিভিত্তিক জীবনযাপনে মানুষের রূপান্তরের ইঙ্গিত বহন করে এসব আবিষ্কার।
আদিম মানুষের আবাসস্থলের কাছেই ছিল বন্য প্রাণীদের উপস্থিতি। তাই এসব হামানদিস্তা এবং হাড় মসৃণ করার যন্ত্রের উপস্থিতিতে অনুমান করা যায়, নব্য প্রস্তর যুগে জন্তু জানোয়ার হাড়ের ভেতরের মজ্জা ছিল মানুষের খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এই সরঞ্জামগুলো রং তৈরিতেও ব্যবহৃত হতো। প্রাকৃতিক রং থেকে তৈরি হয়েছে নানা গুহাচিত্র। এ ছাড়া, উত্তর আরব উপদ্বীপে প্রসাধনী নির্মাণেও এসব রং ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে।
লিখিত ইতিহাসের অনেক আগেই যে শুরু হয়েছিল প্রাচীন মানব সমাজের উন্নতির দিকে পদযাত্রা, সেই জীবনযাপনে ভূমিকা রাখা সরঞ্জামগুলোর দিকে নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদানে সাহায্য করেছে এই আবিষ্কার। সৌদি ভিশন ২০৩০ এ বর্ণিত জাতীয় কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংস্কৃতিক উন্নয়নে হেরিটেজ কমিশনের নিবেদিত প্রয়াসকেই তুলে ধরেছে এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।