অনলাইন ডেস্ক
গাজাবাসীর জীবন থেকে স্রেফ হারিয়ে গেল আরও একটি আনন্দের দিন। বিষাদের মধ্য দিয়ে অঞ্চলটির লাখো মানুষ ঈদুল আজহার আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেন মাত্র। আনন্দ তাদের ছুঁতে পারেনি। কারণ, ইসরায়েলি আগ্রাসন তাদের প্রায় প্রত্যেকের জীবন থেকে কোনো না কোনো প্রিয়জনকে কেড়ে নিয়েছে, বাড়িঘর ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে, খাবারের সংকট তৈরি করেছে। তবু অদম্য গাজাবাসী বিষাদের মহাসমুদ্রে থেকেও চেষ্টা করেছে আনন্দে ভাসার।
গাজায় ঈদের দিন ঘুরে ঘুরে দেখেছেন লেবাননভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-মায়েদিনের প্রতিবেদক। অঞ্চলটির কোথাও আনন্দের লেশমাত্র দেখা যায়নি। অধিকাংশ দোকানই ধ্বংস হয়ে গেছে। যেগুলো চালু আছে, সেগুলোও পণ্যের অভাবে প্রায় বন্ধ। ঈদুল আজহার সবচেয়ে বড় অনুসর্গ কোরবানি হলেও অঞ্চলটির জনগণের কাছে পশু কেনার মতো কোনো অর্থ অবশিষ্ট নেই।
তবে কিছু দাতব্য ও সামাজিক সংগঠন তাদের উদ্যোগে কোরবানির পশু কিনে বিতরণ করেছে মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে। এই ঈদ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে হতাহতদের পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেশি পীড়াদায়ক। বিশেষ করে আহত ও ইসরায়েলি বন্দী ফিলিস্তিনিদের পরিবারের জন্য।
উল্লেখ্য, গাজায় এমন ১০ হাজার আহত লোক আছে, যারা ইসরায়েলি হামলার কারণে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়েছে। এদের সবাই অপেক্ষা করে আছে কখন রাফাহ ক্রসিং খুলবে এবং তারা মিসরে চিকিৎসা নেবে। অন্যথায় আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া, বিগত আট মাসে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে প্রায় ৮ হাজার ফিলিস্তিনিকে বন্দী করে নিয়ে গেছে। এসব বন্দী ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের মুখেও নেই আনন্দের সামান্যতম চিহ্ন।
জাবালিয়া মসজিদের ইমাম বলেছেন, ‘ঈদ গাজায় ফিরে এসেছে। কারণ এই অঞ্চলের জনগণ আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস বজায় রেখেছে, সর্বোচ্চ দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে এবং তাদের ভূমি পুনরুদ্ধার ও দেশের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চড়া মূল্য পরিশোধ করেছে।’ গতকাল রোববার ঈদের খুতবায় তিনি বলেন, ‘দখলদার বাহিনী গাজার জনগণের সংকল্প ভাঙার অপচেষ্টা করছে।’
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনিরা গাজা শহরে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত আল-ওমারি মসজিদে, খান ইউনিসে নিজেদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মাঝে, তাঁবুতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। বিষাদের জীবন হলেও গাজার নারীরা সামর্থ্য অনুসারে মিষ্টিজাতীয় খাবার বিতরণ করেছেন।