পুঁজিবাজারে বিতর্কিত গবেষণা ও বিনিয়োগের জন্য পরিচিত এবং ভারতের আদানি গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে চমকপ্রদ দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে খ্যাতি অর্জন করা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠাতা নেট অ্যান্ডারসন নিজেই এই খবর জানিয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ চালু করা হয় ২০১৭ সালে। এর প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। অ্যান্ডারসন গতকাল বুধবার জানান, বন্ধের সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। তবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা ছিল অত্যন্ত চাপযুক্ত একটি বিষয় এবং কখনো কখনো এই কাজ করতে গিয়ে কর্মীদের পুরোপুরি আবদ্ধ করে রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
নেট অ্যান্ডারসন বলেন, ‘এই কাজ করতে গিয়ে আমার ঘুম অনিয়মিত হয়ে গিয়েছিল। আমি প্রায়ই ঘুম থেকে উঠে যেতাম। কারণ, দিনের বেলায় খেয়াল করিনি এমন কোনো নতুন তদন্তের সূত্র বা কোনো সম্পাদনার ধারণা ঘুমের মধ্যে পেয়ে যাওয়ার পর আমার অস্বস্তি বেড়ে যেত। আর কখনো কখনো এই চাপই আমার ঘুমের বারটা বাজিয়ে দিত।’
অ্যান্ডারসন আরও জানান, তিনি এবং তাঁর দল যে সব বিষয় নিয়ে কাজ করছিলেন তা শেষ করার পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার পরিকল্পনা ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে তিনি লিখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে এই ঘোষণা দিচ্ছি। এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করা আমার স্বপ্ন ছিল।’
উল্লেখ্য, ১৯৩৭ সালে বিস্ফোরিত জার্মান এয়ারশিপ হিন্ডেনবার্গের নামে নামকরণ করা এই প্রতিষ্ঠানটি করপোরেট প্রতারণা, অব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য অনিয়ম নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে পরিচিতি লাভ করে। তারা শেয়ার বাজারের শর্ট-সেলিং পদ্ধতির মাধ্যমে লাভ করত। এই প্রক্রিয়ায় তারা কোনো কোম্পানির শেয়ার ধার করে তা বিক্রি করত, এ আশা নিয়ে যে—শেয়ারটির দাম কমবে এবং তারা কম দামে তা পুনরায় কিনতে পারবে।
তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আদানি গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারমূল্যে কয়েক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। আদানি গ্রুপকে তারা কয়েক দশকের স্টক ম্যানিপুলেশন এবং হিসাব জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল। এর ফলে, কোম্পানিটির ক্ষতি হয় ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে একটি বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ঘুষ–কাণ্ডের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। আদানি গ্রুপ এই অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে এবং সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানায়।
আরেকটি আলোচিত ঘটনায়, ২০২০ সালে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ইলেকট্রিক ভেহিকল স্টার্টআপ নিকোলার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে তারা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে একটি কাজের উপযোগী প্রোটোটাইপ ট্রাক রয়েছে বলে দাবি করেছিল। পরে নিকোলার প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভর মিলটন বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার দায়ে চার বছরের কারাদণ্ড পান।
অ্যান্ডারসন তাঁর নোটে বলেন, তাদের কাজের ফলে প্রায় ১০০ জন বিলিয়নিয়ার ও অলিগার্ক ফৌজদারি বা নাগরিক মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি লিখেন, ‘আমরা এমন কিছু সাম্রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছি যেগুলো আমাদের মনে হয়েছিল নাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। সময়ের সঙ্গে মানুষ বুঝতে পেরেছে যে, পরিবর্তন আনা সম্ভব, আপনি যেই হন না কেন।’
ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাট থেকে স্নাতক অ্যান্ডারসন জানান, আগামী ছয় মাসে তিনি কিছু তথ্য ও ভিডিও প্রকাশ করবেন, যাতে তাদের কাজের পদ্ধতি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। তিনি লিখেছেন, ‘আমার আশা, আমরা এই প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি শেয়ার করার পর কয়েক বছরের মধ্যে কেউ আমাকে একটি বার্তা পাঠাবে—হয়তো আপনি—যিনি এই একই আবেগ ধারণ করেছেন, এই দক্ষতা আয়ত্ত করেছেন এবং কোনো বাধা সত্ত্বেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলো ফেলতে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছেন। সেটা হলে আমি খুব খুশি হব।’