সানজিদা সামরিন, ঢাকা
চা ছাড়া বাঙালির দিন শুরু হয় না। সেই যে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ব্রিটিশেরা বাঙালিদের চা খাওয়ানো শেখাল, তারপর আর বাঙালি পেছন ফিরে তাকায়নি। একথা যে কেবল এই বাংলার জন্যই সত্য, তা কিন্তু নয়। পশ্চিমবঙ্গে পথে দাঁড়িয়ে ডানে–বাঁয়ে তাকালে একটু বাদে বাদেই বেশ কয়েকটা চায়ের দোকান চোখে পড়বেই পড়বে। তারা চায়ে চুমুক দেয়— সকাল, বিকেল, সন্ধ্যা কিংবা রাতে। বাড়ি থেকে শুরু করে অফিসপাড়া, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, খেয়াঘাট, হাট–বাজার, শপিং মল, গলির মোড়ে— কোথায় চায়ের আয়োজন নেই, বলুন তো! ২১ মে, আন্তর্জাতিক চা দিবস। এই অজুহাতে একটু চায়ের আড্ডা হয়ে যাক।
যা বলছিলাম আরকি, এই বসন্তে কলকাতায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। হোটেলে ব্যাগপত্র রেখে খেয়েদেয়ে সোজা চায়ের দোকানে। দাম মেটাতেই বুঝলাম গতবারের তুলনায় মাটির ভাঁড়ের চায়ের মূল্য বেড়ে ১০ থেকে ১২ টাকা হয়েছে। ঠোঁট ছোঁয়াতেই মাটির স্বাদ; ঘন লিকারের দুধ চা সারা দিনের ক্লান্তি জুড়িয়ে দিল।
কলকাতায় মসলা ও মাটির ভাঁড়ের চা প্রতিদিনের একটি অপরিহার্য পানীয়। পথের ধারে দাঁড়িয়ে গল্প–আড্ডা, মৌজ-মাস্তি ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার টেবিলে চাই গরমাগরম চা। কলকাতায় মাটির ভাঁড়ের দুধ চায়ের চাহিদা বেশি। ব্ল্যাক টি–তে আদা, গরম মসলা, দুধ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয় এই জম্পেশ চা। বাংলাদেশ থেকে আমরা হুটহাট গিয়ে মাটির ভাঁড়ে ঢেলে দেওয়া চা নিয়ে সেলফি তুলে আদিখ্য়েতা করলেও, সেখানে এই ভাঁড় ও ভাঁড়ের চা নিত্য়কার বিষয়। ছোট, মাঝারি, বড়, ভাঁড় রয়েছে এই তিন আকারের। যে যেমনটা চায় আরকি! চা পান শেষে সেই সব ভাঁড় পাশে রাখা ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলে দাও। আহা! ঝুড়িতে ফেলে দেওয়া পাট পাট করে ভেঙে যাওয়া চায়ের ভাঁড়গুলো দেখে হৃদয়টাই ভেঙে যাচ্ছিল। কল্পনায় ভেসে উঠছিল, এই ভাঁড়গুলো পেলে কী কী বানাতাম, কী কী–ই না করতাম! সে প্রসঙ্গও এবার খানিকক্ষণের জন্য তোলা থাক। আগে চায়ের প্রসঙ্গটা শেষ করি।