হোম > জাতীয়

রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী নিয়োগে অ্যাটর্নি সার্ভিস হচ্ছে

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা 

ফাইল ছবি

সারা দেশের জেলা আদালত ও উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য স্থায়ী আইনজীবী নিয়োগ দিতে পৃথক অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে করা সুপারিশে এ বিষয়ে প্রস্তাব করেছে। এতে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন, রাষ্ট্রপক্ষের স্থায়ী আইনজীবী নিয়োগ ও পদোন্নতির রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।

এ প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আইনজীবীরা। সংস্কার কমিশন বলছে, অ্যাটর্নি সার্ভিসের মাধ্যমে যোগ্যদের নিয়োগ দিলে মামলায় প্রকৃত আসামিদের সাজার হার বাড়বে। দেওয়ানি মামলায় রাষ্ট্র লাভবান হবে।

সারা দেশের জেলা আদালত ও উচ্চ আদালতে সব ধরনের মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের অন্তত একজন আইনজীবী থাকেন। অস্থায়ী ভিত্তিতে এই আইনজীবীদের নিয়োগ দেয় সরকার। অভিযোগ রয়েছে, সব সরকারের আমলেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিয়োগে দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে। এ কারণে অতীতে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক আইনজীবী এই নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাবে রাষ্ট্রপক্ষ মামলায় হেরে যাওয়ার অনেক নজিরও রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (অধস্তন আদালতে পিপি, এপিপি, জিপি, এজিপি এবং উচ্চ আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল) হিসেবে যোগ্যদের নিয়োগ দিতে পৃথক অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কোনো সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি। প্রতিটি সরকার অস্থায়ী ভিত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করেছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন আইনজীবীদের দাবিকে আমলে নিয়েছে। ১১ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে দেওয়া কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগে পৃথক অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের সুপারিশ করা হয়। এতে আইনজীবী নিয়োগ, পদোন্নতির রূপরেখাও তুলে ধরা হয়েছে। বেতনকাঠামো, নিয়োগপ্রক্রিয়াসহ অন্যান্য বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন আজকের পত্রিকাকে বলেন, অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনায় অস্থায়ী ভিত্তিতে আইনজীবী নিয়োগ হয়েছে। এতে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ মামলা পরিচালনায় প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারেনি। স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস হলে মামলা নিষ্পত্তির হারের সঙ্গে গুণগত মানও বাড়বে। এখন মামলায় সাজার হার মাত্র ৮ শতাংশ। এর মধ্যে অনেকে থাকে নির্দোষ। এতে করে প্রসিকিউশনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস হলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। এখন প্রাথমিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেওয়া হবে। সেখানে আরও বিস্তারিত থাকবে।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ওই সুপারিশে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সব স্তরের আইন কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং অপ্রতুল আইনি কাঠামোর আওতায়। আইন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জবাবদিহির কোনো আইনি কাঠামো নেই। যোগ্যতা বা দক্ষতা বা সততা নয়, মূলত আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগকে বিবেচনা করা হয় রাজনৈতিক আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে। সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের আইন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের মান মোটেও সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে। এমন অ্যাটর্নি সার্ভিস বিভিন্ন দেশে রয়েছে।

এ প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও ফৌজদারি মামলার বিশেষজ্ঞ এস এম শাহজাহান বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় আইন কর্মকর্তা নিয়োগ বন্ধে অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন করা উচিত। দলীয় সরকার নিয়োগ দেওয়ায় দলের প্রতি দুর্বলতা থাকে। তাই দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে বিচারক নিয়োগ যেভাবে হয়, সেভাবেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিয়োগ হতে হবে। তাহলে বিচারকের মতো প্রসিকিউটরও নিরপেক্ষ থাকবেন। তিনি দলের প্রসিকিউটর হবেন না। এতে বিচারপ্রার্থীদের উপকার হবে, মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, অ্যাটর্নি সার্ভিস হবে স্থায়ী পেনশনযোগ্য সরকারি চাকরি। এই সার্ভিসের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো, নিয়োগপদ্ধতি, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা, বেতনকাঠামোসহ আর্থিক সুবিধাদি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে যথাযথ বিধানসংবলিত আইন থাকবে। প্রস্তাবিত সার্ভিসের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট ও জেলা ইউনিট থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটে থাকবেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও অ্যাটর্নি জেনারেল। জেলা ইউনিটে থাকবেন সহকারী জেলা অ্যাটর্নি, সিনিয়র সহকারী জেলা অ্যাটর্নি, যুগ্ম জেলা অ্যাটর্নি, অতিরিক্ত জেলা অ্যাটর্নি ও জেলা অ্যাটর্নি। জেলা ইউনিটের কর্মকর্তাদের আন্তজেলায় বদলি, জেলা ইউনিট থেকে সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটে বদলি ও পদোন্নতির সুযোগ থাকবে।

প্রস্তাবে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট থেকে যোগ্যতাসম্পন্ন অ্যাটর্নি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগ পেতে আবেদন করতে পারবেন। অ্যাটর্নি সার্ভিসের প্রশাসনিক, আর্থিক, অবকাঠামো, সহায়ক জনবলসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ের দায়িত্ব থাকবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের একটি পৃথক ইউনিটের ওপর। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৪৪ বছর। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হতে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ৩ বছর দায়িত্ব পালনের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হতে পারবেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের অবসরের বয়সসীমা হবে ৬৫ বছর। সহকারী জেলা অ্যাটর্নি নিয়োগের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩৫ বছর। পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ সিনিয়র সহকারী জেলা অ্যাটর্নি পদে পদোন্নতি পেতে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে। সিনিয়র সহকারী জেলা অ্যাটর্নি থেকে যুগ্ম জেলা অ্যাটর্নি হতে ৪ বছর, অতিরিক্ত জেলা অ্যাটর্নি হতে পূর্ববর্তী পদে ৩ বছর এবং সেখান থেকে জেলা অ্যাটর্নি হিসেবে পদোন্নতি পেতে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে। জেলা অ্যাটর্নির অবসরের বয়সসীমাও হবে ৬৫ বছর।

ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের সুপারিশ অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। তবে নিয়োগপ্রক্রিয়া অবশ্যই স্বচ্ছ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে। এ জন্য অ্যাটর্নি সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে বিচার বিভাগ সচিবালয়ের হাতে।

পাঁচ মাসে মাজার-দরগায় ৪৪ হামলা: প্রেস উইং

বিএফআইইউয়ের সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

লেবানন থেকে ফিরলেন আরও ৪৭ বাংলাদেশি

বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না হুমায়ুনের

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ৬ দিন সময়

সস্তায় বিক্রি হচ্ছে শৈশব

হজযাত্রীদের সঙ্গে চুক্তি করছে না এজেন্সিগুলো

বেশি দামে কেনা নেপালের বিদ্যুতেও ভারতনির্ভরতা

দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে একগুচ্ছ সুপারিশ কমিশনের

আদিবাসীকে অস্বীকারের সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতার সম্পর্ক আছে: আনু মুহাম্মদ

সেকশন