১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া শিশুতোষ চলচ্চিত্র `ছুটির ঘণ্টা' দেখে কাঁদেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঈদের ছুটি ঘোষণার দিন স্কুলের বাথরুমে সবার অজান্তে তালাবন্ধ হয়ে আটকে পড়ে ১২ বছরের শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে দর্শক।
সিনেমায় দীর্ঘ ১১ দিনের ছুটি শেষ হওয়ার পর শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। অনেকটা একই রকম ঘটনা ঘটল চাঁদপুরে। অবশ্য ভাগ্যগুণে ১১ ঘণ্টা পর কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটির পর সবাই বাড়ি গেলেও বিদ্যালয়ের বাথরুমে আটকা পড়েছিল শারমিন। সে বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় বাইরে থেকে তালা লাগানোর সময় কেউ কিছু টের পায়নি। রাতে রাস্তায় ঘুরতে আসা এক তরুণ দেখতে পেলে রাত ১০টার পর বাথরুমের তালা ভেঙে ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের হোসেনপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ঘটেছে এ ঘটনা। এতে বিদ্যালয়ের কারও গাফিলতি পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার।
ছুটির পর বাড়ি না ফেরায় শারমিনের বাবা তার সহপাঠী ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজখবর করতে শুরু করেন। রাত ১০টার পর স্থানীয় স্বর্ণকারবাড়ির আল আমিন বিদ্যালয়ের পাশে পুলের ওপর ঘুরতে আসেন। তিনি স্কুলের বাথরুম থেকে আওয়াজ শুনতে পান। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন এসে তালা ভেঙে শারমিনকে উদ্ধার করে।
আজ সরেজমিনে ওই ছাত্রীর বাড়িতে গেলে সে ইশারা-ইঙ্গিতে গতকালের ঘটনা বোঝানোর চেষ্টা করে। বাথরুমে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার সময় উদ্ধারের সাহায্য চেয়ে জোরে চিৎকার করার চেষ্টা করেছে শারমিন। এতে তার গলা ও মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে তার অবস্থা বেশ ভালো।
শারমিনের বাবা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, `রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অজানা শঙ্কা নিয়ে মেয়েকে খুঁজেছি। বিদ্যালয় ছুটির পর শারমিন বাড়ি না ফেরায় সহপাঠী ও স্বজনদের বাড়িতে হন্যে হয়ে খোঁজ নিয়েছি। আমার মেয়ে বারবার লোকজন ডাকার চেষ্টা করতে গিয়ে তার গলা ও মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেছে।'
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের আয়া শাহানারা আক্তার শানু বলেন, সাড়ে ১২টায় নয়, তিনি বিকেল ৪টার দিকে বাথরুমের তালা বন্ধ করেছেন। তবে ভেতরে কেউ আছে কি না, তা তিনি তখন না দেখেই দরজা বন্ধ করেছেন বলে স্বীকার করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমীর হোসেন জানান, তিনি বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজে বিদ্যালয়ে ছিলেন। বের হওয়ার আগে পর্যন্ত এমন কিছু তাঁর নজরে পড়েনি। রাতে ফোনে ঘটনা জানতে পেরে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ওই ছাত্রীর বাড়ি পাঠান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার বলেছেন, `আমি ঘটনা জেনে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আহসান উল্যাহ চৌধুরীকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের কারও গাফিলতি পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আহসান উল্যাহ চৌধুরী জানান, তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।