মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণি ও সুগন্ধা পয়েন্টের মাঝামাঝি সিগাল বিচ পয়েন্ট দাঁড়িয়ে আছে ৬২ ফুট উচ্চতার ‘দানব রোবট’। তবে বাস্তবে এটি কোনো দানব নয়। বিশালাকৃতির এই ভাস্কর্যটি বানানো হয়েছে সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের এলাকা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে। এর দুই পাশে আরও দুটি ছোট ছোট ভাস্কর্য বানানো হয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়িতে বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা প্লাস্টিকের এই ভাস্কর্যটি দেখতে বেড়াতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়রা ভিড় করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার সৈকত, সেন্ট মার্টিন ও রামু থেকে সংগ্রহ করা ১০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে এই ভাস্কর্য বানানো হয়েছে। মূলত সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে পর্যটকসহ ও স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এই উদ্যোগ নিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী কয়েক দিন কাজ করে প্লাস্টিক বর্জ্যের সঙ্গে কাঠ, পেরেক ও আঠা লাগিয়ে ৬২ ফুট উচ্চতার দানব আকৃতির ভাস্কর্যটি তৈরি করেছেন। এর দুই পাশে ১৫ ফুট উচ্চতার দুটি দৈত্যের ভাস্কর্যও বানানো হয়েছে।
গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এই ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন। এরপর সবার জন্য ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত করা হয়।
এর আগে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের করতে গত ৭ নভেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ ও স্থানীয়দের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ মার্কেট’ চালু করা হয়। সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিয়ে চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করেছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া একই পদ্ধতিতে সেন্ট মার্টিন ও রামু উপজেলা থেকেও প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তিন এলাকা থেকে অন্তত ১০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
২০২২ সালেও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ৪২ ফুট উচ্চতার একটি প্লাস্টিক দানবাকৃতির ভাস্কর্য বানানো হয়েছিল। প্রায় তিন মাস ওই ভাস্কর্যটি প্রদর্শনের জন্য রাখা ছিল।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন জানান, এবারের ‘দৈত্য-দানব’ চার মাস ধরে প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে আমরা সারা দেশ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে প্লাস্টিক বর্জ্য ম্যানেজমেন্টে সরকারি খরচ যেমন কমবে, তেমনি মানুষও জানতে পারবে কীভাবে রিসাইকেলের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবির কর্মকার দাবি করেছেন, এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্লাস্টিকের তৈরি দানব। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে লোকজনকে সচেতন করতে এই ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। এতে করে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে মানুষ সচেতন হবেন।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি পর্যটক ও স্থানীয়রাও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে সচেতন হবেন।’