নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনে অংশ নেওয়া রোগীর স্বজনকে ধরে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পাঁচলাইশের সাবেক ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার এবং একই থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিআইডি (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ) মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। কিন্তু আমরা সেই প্রতিবেদনে নারাজি দিয়েছিলাম। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমাদের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে পরে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করি। সেই প্রেক্ষিতে গত বছর আদালত আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।’
আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান আরও বলেন, ‘আদালত আজ মঙ্গলবার শুনানি শেষে সাবেক ওসি নাজিম ও এসআই আজিজের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তার মাধ্যমে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোগী ও তাঁদের স্বজনরা আন্দোলনে নামে। আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় পাঁচলাইশ থানার তৎকালীন ওসি নাজিম উদ্দিন নিজের মোবাইল ফোন বের করে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও ধারণ করেন এবং তাঁদের পরে দেখে নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। এরপর একযোগে সবাই ওসির বিরুদ্ধে হইচই শুরু করেন এবং ভিডিও ডিলিট করার দাবি জানান। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর ওই দিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় মোস্তাকিম নামের এক রোগীর স্বজনকে। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা এবং কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোস্তাকিমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরে জামিনে মুক্ত হয়ে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে পিটিশন মামলা করেন মোস্তাকিম। আদালত পিটিশনটি নিয়মিত মামলা হিসেবে পাঁচলাইশ থানায় রেকর্ডের আদেশ দেন। একই সঙ্গে মামলাটি এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে সিআইডিকে তদন্তের আদেশ দেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ২০২৪ সালের ১১ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় সিআইডি।
সিআইডি মামলাটিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের দায় এড়িয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জিয়া হাবীব আহসান। পরে ওই প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দিয়েছিলেন মোস্তাকিমের আইনজীবী।