জুলাই গণ-অভ্যুত্থান
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের সুনির্দিষ্ট তালিকা অভ্যুত্থানের চার মাস পরও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আহত অনেকেই পরিপূর্ণ সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসনেও ধীর গতি। কিন্তু এই শহীদদের তালিকা, আহতদের চিকিৎসা সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রাখতে শহীদদের তালিকা ও আহতদের সুচিকিৎসার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ‘সন্তান ও অভিভাবক সম্মেলনে’ বক্তারা এসব অভিমত তুলে ধরেন। সন্তান ও অভিভাবক ফোরাম এ আয়োজন করে।
শহীদ নাফিসের বাবা গোলাম রহমান বলেন, ‘যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁরা আমাদের মাঝে নেই। তবে আহতদের সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের এখন প্রধান দায়িত্ব।’
সিলেটে আন্দোলনে আহত সাকি তাঁর নির্মম অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘১২ জন পুলিশ আমাকে পিটিয়েছে এবং পরে বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে। আহতরা রাষ্ট্রের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন, কিন্তু আজ যখন আমাদের প্রয়োজন, তখন রাষ্ট্র কোথায়?’
রাজধানীর ধূপখোলা করোনেশন উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলামিন হোসেন আন্দোলনে নিজের বাঁ পা হারায়। সে জানায়, ‘ব্র্যাক থেকে আমাকে একটি কৃত্রিম পা দেওয়া হচ্ছে।’ সে আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে জরুরি সহায়তার আহ্বান জানায়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শহীদ ও আহতদের একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা জরুরি। কারণ ৫৩ বছরে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক তালিকা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছি। অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছাড়াই মারা গেছেন। আমরা চাই না জুলাই আন্দোলনের ক্ষেত্রে এমনটি হোক।’
জুলাই অভ্যুত্থানের অধিকাংশ শহীদ ও আহত নিম্নবিত্ত শ্রেণির উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘অনেক পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, অথচ আহতদের দায়িত্ব নিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ। কেন আমাদের অনুরোধ করতে হবে?’
তবে সরকার শহীদদের তালিকা ও আহতদের পুনর্বাসনের যে প্রতিশ্রুতি ও সংস্কারের অঙ্গীকার করেছে, তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে বলে জানান প্রধান অতিথি ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসিনি, দায়িত্ব নিয়েছি। আহতদের পুনর্বাসন ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের প্রধান দায়িত্ব। শহীদ ও আহতদের তালিকা এখনো অসম্পূর্ণ। তবে তা সঠিক করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সরকারের অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘যদি ডুবন্ত ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে ২২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া যায়, তবে যাঁরা দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন, তাঁদের কেন এখানে এসে দাঁড়াতে হবে? রাষ্ট্রের উচিত তাঁদের সুস্থতা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।’
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মোহন রায়হান এবং নাটক পরিবেশন করেন নাট্যদল বটতলা।