বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় কোনো পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে আজ সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া।
তবে তদন্ত প্রতিবেদন মনগড়া বলে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়ার পরিবার।
আজ সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক টিটো মিয়া বলেন, ‘অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর অভিযোগ অনুযায়ী রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র (শেখ কামাল ভবন, অষ্টম তলা) আমাদের তদন্ত কমিটি পরিদর্শন করেছে। তারা শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছে। সব মিলিয়ে আমরা জানতে পেরেছি, পরীক্ষার দিন ওএমআর শিট ছেঁড়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই ছাত্রীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার দুই দিন পর হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া নামে এক নারী পরীক্ষার্থী স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগে বলা হয়, পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিট পর তাঁর পাশের একজন হিজাব পরা শিক্ষার্থীর কাছে হলের দায়িত্বরত নারী পর্যবেক্ষক কানে থাকা ডিভাইস উদ্ধার করেন। এ সময় কানে ডিভাইস রাখা মেয়ের সঙ্গে পাশের দুই শিক্ষার্থী হুমাইরা ইসলাম ও আরেকজনের যোগসাজশের অভিযোগ তুলে সবার উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। কিন্তু ডিভাইস উদ্ধার করা শিক্ষার্থীর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত অন্য দুজনের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে হুমাইরা ও তাঁর পাশের আরেকজন মেয়েকে নতুন প্রশ্ন ও ওএমআর শিট দেওয়া হয়।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক কাজী আফজালুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যসচিব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের থোরাসিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আলম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামাল হোসেন সদস্য।
গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। আজ সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ওই শিক্ষার্থী ও তাঁর অভিভাবকেরা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে দেখা করেন। তখন তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু জানানো হয়। তবে তাঁরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।
এ প্রসঙ্গে হুমাইরা ইসলামের ভাই ডা. রেদওয়ান আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি অধিদপ্তরের মনগড়া।’ তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার আমাদের ডাকা হয়। সেখানে গিয়ে দেখি, অভিযোগ দিতে গেলে যে চিকিৎসক আমাদের গায়ে হাত তোলেন, সেই ডা. আফজালুর রহমানই সাক্ষ্য নিচ্ছেন। তাঁরা বাবা-মা ও শিক্ষার্থীর মৌখিক সাক্ষ্য নেন এবং তাঁরা কী লিখেছেন সেটি দেখতে দেননি। ওই দিনের সাক্ষ্যর সঙ্গে আজকের প্রতিবেদনের কোনো মিল নেই।’ তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এ দেশে কোথায় গেলে বিচার পাব?’