বর্তমান সময়ে এক আলোচিত সামাজিক সমস্যার নাম ‘কিশোর গ্যাং’। উদ্ভট সব নামে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার না হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারে কিশোরেরা যুক্ত হয়ে পড়ছে এসব গ্যাং এর সঙ্গে। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধ। টিকটক, লাইকি, ইমো, ফেসবুক সহ নানান ডিজিটাল মাধ্যমের অত্যধিক এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে বিপথগামী হচ্ছে দেশের কিশোর-তরুণ সমাজ। তাই কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতিকে রুখতেই হবে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
আজ শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘কিশোর গ্যাং বৃদ্ধির কারণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আগামী দিনের তরুণ প্রজন্মকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আমাদের পারিবারিক বন্ধন ইতিবাচকভাবে ধরে রাখতে হবে। কিশোরদের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায় আছে। সবাই সবার জায়গা থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিশোর অপরাধ রুখতেই হবে।’
প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢেঁকির বদলে যখন কলের ইঞ্জিন এল তখন কিন্তু কলের ইঞ্জিনকে আমরা গ্রহণ করেছি। কোন কিছুই বাদ দেওয়া যাবে না। প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে হবে। একসময় ট্রেনের খবর জানতে স্টেশনে যেতে হতো, এখন মোবাইলে সহজেই ট্রেনের লোকেশন দেখা যায়। প্রযুক্তিকে কখনোই ছুড়ে ফেলা যাবে না, প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে।’
এ বছর ২৫২ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে র্যাব প্রধান বলেন, ‘কিশোর অপরাধ হ্রাস করতে বই পড়া, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি করতে হবে। মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা যাবে না, ওষুধ ব্যবহার করব। দেশের সবার আর্থিক সক্ষমতা বাড়ছে। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে কিশোর অপরাধের মাত্রা কমবে বলে বিশ্বাস করি।’
বিতর্কের আলোচনা সম্পর্কে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সকল আলোচনাই এখানে এসেছে। যেভাবেই হোক এই গ্যাং কালচারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা না। একই সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির একটি উদ্যোগ।’
ডিজিটাল মিডিয়াগুলো সুস্থ বিনোদন ও সমাজের ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরার জন্য তৈরি করা হলেও এর ব্যাপকভাবে অপব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সুপারিশে তিনি জানান, শিশু কিশোরদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে পাঠাগার, খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। ফ্রি-ফায়ার, পাবজির মতো অন্যান্য অ্যাপস গুলোও বন্ধ করতে হবে। কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত আইনের জটিলতা নিরসন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার না করা, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, রাত দশটার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ করেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি কিশোর সংশোধন কেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়নের আহ্বান জানান।
প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ এবং বিরোধী দল হিসেবে সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের বিতার্কিকেরা অংশগ্রহণ করে। বিতর্কে কিশোর গ্যাং বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার অবাধ ব্যবহারকে দায়ী করেন সরকারি দল।
অন্যদিকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে সোশ্যাল মিডিয়ার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার একটি পরোক্ষ কারণ। পারিবারিক সংস্কৃতির অভাব, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও এর অপব্যবহার, দারিদ্র্য ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের অভাব কে প্রত্যক্ষ কারণ হিসেবে মনে করেন তারা। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী উভয় দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।