অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আবু সাঈদের বাংলাদেশে কোনো ভেদাভেদ নেই। আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে। বাংলাদেশে জাতিধর্ম-নির্বিশেষে সবারই সন্তান আবু সাঈদ।’
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা শেষে তাঁর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রকাশ্যে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ। আজ শনিবার তাঁর বাড়িতে আসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ছিলেন। এ সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখতে হাজারো ছাত্র-জনতা পুরো গ্রামে ভিড় জমায়।
এ সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে। বাংলাদেশে যত পরিবার আছে, সব পরিবারের সন্তান আবু সাঈদ। বাংলাদেশে জাতিধর্ম-নির্বিশেষে সবারই সন্তান আবু সাঈদ।’
সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলা যেন কোথাও না হয়। হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক—সবার ঘরের সন্তান আবু সাঈদ। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন, কোথাও কোনো গোলযোগ যেন না হয়। কেউ যেন ধর্ম নিয়ে কথা না বলে। কারণ, আমরা এই মাটিরই সন্তান। সবাই আবু সাঈদ।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘সন্তানদের রক্ষা করা জাতিবর্ণ-নির্বিশেষে এটা এখন আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করি, সামনে গিয়ে দাঁড়াই। আবু সাঈদ যে রকম দাঁড়িয়েছে, আমাদেরও ও রকম দাঁড়াতে হবে। যারা পার্থক্য করে এ রকম সন্তান, ও রকম না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমরা বাংলাদেশেরই সন্তান।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আবু সাঈদের মা সবার মা এবং সবার মা আবু সাঈদের মা। কাজেই তাঁকে রক্ষা করতে, তাঁদের বোনদের রক্ষা করতে হবে, তাঁদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটা করো। এটা এক বাংলাদেশ। দুই বাংলাদেশ না। এটা আবু সাঈদের বাংলাদেশ। এই আবু সাঈদের বাংলাদেশে কোনো ভেদাভেদ নাই। আপনাদের কাছে অনুরোধ, যে যেখানেই আছেন, আবু সাঈদের মা, বাবা, ভাই-বোন, যাঁরা যাঁরা যেখানে আছেন, প্রত্যেককে রক্ষা করুন। কোনো রকম গোলযোগ করতে দেবেন না।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হেলিকপ্টারে ড. ইউনূস ও দুই উপদেষ্টা পীরগঞ্জের রংপুর মেরিন একাডেমিতে অবতরণ করেন। এরপর তিনি আবু সাঈদের বাড়িতে যান। তিনি ও দুই উপদেষ্টা আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। এরপর আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে গাড়িতে আবার পীরগঞ্জের মেরিন একাডেমিতে আসেন। এ সময় ডাকসুর সাবেক সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমকেও দেখা যায়।
দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে রংপুর সেনানিবাসে আসেন ড. ইউনূস। সেখান থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছাত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় ছাত্ররা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন এবং আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। বেরোবি থেকে বেলা ২টার দিকে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত চিকিৎসাধীনদের খোঁজখবর নেন। এরপর তিনি জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রংপুর সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভা করেন।
আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে প্রকাশ্যে পুলিশ গুলি করে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়। ১৭ জুলাই বাবনপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাঁকে।