প্রতিনিধি, বদরগঞ্জ
সারা দেশের মতো বদরগঞ্জ উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে সরকারি ঘর। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এই ঘর নির্মাণে স্বচ্ছতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সদ্যবিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান। প্রকল্প থেকে সাশ্রয় করা ২৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন সরকারের কোষাগারে।
ইউএনও মেহেদী বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে বাড়ি নির্মাণে পাঁচ সদস্যের কমিটি ছিল। আমি কাজ শুরু করার আগে কমিটির সদস্যদের নিয়ে বসেছিলাম। তাঁদের বলেছিলাম, যদি বাড়ি নির্মাণ করে টাকা বেঁচে যায়, তাহলে বেঁচে যাওয়া টাকা সরকারকে ফেরত দেব। তাঁরা আমার সঙ্গে একমত ছিলেন।’
মুজিববর্ষ উপলক্ষে এসব বাড়ি নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রশাসনের হাতে। প্রশাসন শ্রমিক দিয়ে নির্মাণকাজ করে। বদরগঞ্জে ২৯৬টি ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি (প্রত্যেক বাড়ি দুই শতক জমির ওপর) বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ইউএনও মেহেদী প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৮৬টি বাড়ির বরাদ্দ পান। দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা করে ব্যয়ে আরও ১০টি বাড়ি করার আদেশ পান। এ ছাড়া জায়গা আছে ঘর নেই এমন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য ৩০টি এবং ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য আটটি বাড়ির বরাদ্দ পান। এ বাড়ির ব্যয়ও ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ধরা হয়।
ঘর নির্মাণে যাতে কোনো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা না হয়, সেদিকে কঠোরভাবে খেয়াল রেখেছিলেন ইউএনও। পরিকল্পনা অনুযায়ী বরাদ্দের বাড়ি নির্মাণের পর ২৫ লাখ টাকা বেঁচে যায়। ইউএনও এই ২৫ লাখ টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দেন।
ইউএনও মেহেদী বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রের কর্মচারী হয়ে বাড়ি নির্মাণে তদারকি করে বেঁচে যাওয়া টাকা পকেটজাত করব–তা হতে পারে না। দায়িত্ববোধ থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। আমি পারতাম বেঁচে যাওয়া টাকা পকেটে নিতে, ধরার কেউ ছিল না। কিন্তু সেটা করিনি। সরকারের কোষাগারে টাকা ফেরত দিয়ে নিজের খুব ভালো লাগছে।’
ইউএনও মেহেদী হাসান ২০২০ সালের ৩১ মে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা থেকে বদলি হয়ে বদরগঞ্জ উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন। তিনি সম্প্রতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। বদরগঞ্জ উপজেলায় গত বুধবার ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস। তাঁর নতুন গন্তব্য দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
ইউএনও মেহেদীকে একজন মানবিক কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, ‘ইউএনও মেহেদী হাসান ভূমিহীনদের বাড়ি করার পর বেঁচে যাওয়া টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর এই নৈতিকতা দেখে আগামীতে দেশের অন্যান্য কর্মকর্তাও অনুপ্রাণিত হবেন বলে আশা করি।’