সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
স্বয়ংক্রিয় হেমাটোলজি অ্যানালাইজার মেশিনে রক্ত পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য (রি-এজেন্ট) নেই ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে। এতে প্রায় এক বছর ধরে পড়ে আছে এই মেশিন। সাধারণভাবে করা রক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদনে ভুল থাকার আশঙ্কা ও বেশি সময় লাগায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন অনেক রোগী।
সেবা প্রত্যাশী রোগীরা বলছেন, চিকিৎসক দেখিয়ে রক্তের পরীক্ষা করাতে সময় বেশি লেগে গেলে পুনরায় চিকিৎসক দেখাতে বেগ পেতে হয়। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের পরে বহির্বিভাগের চিকিৎসক চেম্বার থেকে উঠে যান। এতে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ভোগান্তি হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একদিন পর রোগী দেখাতে হয় চিকিৎসকে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, দ্রুত সময়ে নির্ভুল রক্ত পরীক্ষার জন্য ২০২৩ সালের মার্চে কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে একটি হেমাটোলজি অ্যানালাইজার মেশিন হস্তান্তর করা হয়।
মেশিনটি হস্তান্তরের এক মাস পরে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্যের (রি-এজেন্ট) সংকট দেখা দেয়। কিন্তু প্রায় ১ বছর পার হলেও যন্ত্রটির রি-এজেন্ট সরবরাহ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সচল এই যন্ত্রটি রোগীদের কোনো কাজেই আসছে না।
আজ বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, প্যাথলজি বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড় দেখা যায়। সেখানে আশরাফুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ভিড়ের কারণে সকাল ১০টায় টিকিট কেটে লাইনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর পৌনে ১টায় ডাক্তারের কক্ষে ঢোকার সুযোগ পেয়েছি। চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার পর ডাক্তারকে দেখাতে পারব কী না চিন্তা হচ্ছে।’
আসমা বেগম নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘মাকে ডাক্তার দেখিয়ে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছি। দুই ঘণ্টা পর এখন রিপোর্ট দিছে। আরও দ্রুত সময়ে রিপোর্ট দিলে চিকিৎসককে সঠিক সময়ে দেখানো যেতো।’
হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ল্যাব (ইনচার্জ) ফনিন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘যেখানে টেকনোলজিস্টদের হাতে পরীক্ষা করতে সময় লাগে ১ ঘণ্টার মতো সেখানে মাত্র ২ মিনিটে হেমাটোলজি অ্যানালাইজার মেশিন দ্বারা শতভাগ নিখুঁত রিপোর্ট দেওয়া যায়। এ ছাড়া হাতের পরীক্ষায় ৮০-৯০ ভাগ নির্ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রতিদিন গড়ে এই মেশিনে ১ হাজার রোগীর রক্ত পরীক্ষা করা সম্ভব। তবে রি-এজেন্টের অভাবে এটি চালু করা যাচ্ছে না। প্যাথলজি বিভাগে স্থাপনের ১ মাস পর এর রি-এজেন্ট শেষ হয়ে যায়।’
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টেন্ডার দেওয়া হয়েছে রি-এজেন্ট পেলে মেশিনটি আবার চালু হবে।’ মেশিনটি এক বছর ধরে পড়ে থাকার সময়ে রি-এজেন্ট না কেনার বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘হাসপাতালে যোগদানের তিন মাস হয়েছে। এর মধ্যে রি-এজেন্টের জন্য টেন্ডার সাবমিট করেছি। আগে কেনও কেনা হয়নি এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না।’