কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গত ১৬ জুলাই নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক আবু সাঈদ। এ ঘটনার পর পরিবারকে জোরজবরদস্তি করে গণভবনে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর বড় ভাই রমজান আলী।
আজ শনিবার সকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস রংপুরে আবু সাঈদের বাড়িতে আসেন। পরে নিজের অনুভূতি প্রকাশের সময় আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী এ অভিযোগ করেন।
রমজান আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা জোর করে জবরদস্তি করে ডাকে নিয়া গেছে আর ইনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) আসার (ক্ষমতায়) সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাসায় আসছে। এটা তো আমাদের সৌভাগ্য। আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি আমাদের পাশে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।’
ড. ইউনূসের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে জানতে চাইলে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছেলের নামে সরকারি হাসপাতাল চাছি, যাতে মানুষ বিনা মূল্যে ওষুধ পায়। একটা মসজিদের দাবি জানাইছি। রাস্তা, কলেজের নামকরণ করতে বলছি। মাদ্রাসা যেন হয়। আর ছেলের হত্যার বিচার চাইছি। উনি সব করবে কথা দিছে। শুধু আজ না, সব সময় পাশে থাকবে। উনি অনেক ভালো মানুষ।’
আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর হৃদয়বিদারক কান্না আর আহাজারি করেন তাঁর বোন সুমি আক্তার। বিশ্ব দরবারে তাঁর আহাজারিতে লাখো মানুষের চোখ ভিজেছে।
সুমি আক্তার বলেন, ‘স্যারের কাছে আমার ভাইকে যে হত্যা করেছে, তার ফাঁসি চাইছি। এর পেছনে যারা আছে, যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের ফাঁসি চাইছি। আমার ভাইয়ের মতো যারা আন্দোলনে মারা গেছে, তারা যেন ন্যায্য বিচার পায়। আবু সাঈদের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা ক্যাম্পাস, মসজিদ-মাদ্রাসা, রাস্তা, কালভার্ট যেন তৈরি করা হয়। আমার ভাইকে যেন শহীদ মর্যাদা দেওয়া হয়। আমরা এই দাবিগুলো উপস্থাপন করছি। উনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করবেন।’
আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১৭ জুলাই বাবনপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাঁকে। আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হলে সারা দেশে আন্দোলন জোরদার করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে পীরগঞ্জে রংপুর মেরিন একাডেমিতে আসেন ড. ইউনূস। সেখান থেকে ১১টায় তিনি বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে গাড়িতে যান এবং আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘আবু সাঈদের মা সবার মা এবং সবার মা আবু সাঈদের মা। কাজে তাঁকে রক্ষা করতে, তাঁদের বোনদের রক্ষা করতে হবে, তাঁদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটা করো। এটা এক বাংলাদেশ, দুই বাংলাদেশ না। এটা আবু সাঈদের বাংলাদেশ। এই আবু সাঈদের বাংলাদেশে কোনো ভেদাভেদ নাই। আপনাদের কাছে অনুরোধ যে যেখানেই আছেন, আবু সাঈদের মা, বাবা, ভাইবোন যারা যারা যেখানে আছে প্রত্যেককে রক্ষা করুন। কোনো রকম গোলযোগ করতে দেবেন না। আজকে যে আসলাম এখানে এটা স্মরণ করেন, আমরা যাতে বাস্তবায়ন করতে পারি।’
আবু সাঈদের বাড়ি থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রংপুর মেরিন একাডেমির দিকে রওনা হন। সেখান থেকে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে রংপুর সেনানিবাসে আসেন তিনি। সেখান থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছাত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় ছাত্ররা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অবস্থান নেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। বেরোবি থেকে বেলা ২টার দিকে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত চিকিৎসাধীনদের খোঁজখবর নেন। এরপর তিনি জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রংপুর সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভা করেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।